শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় বালু খেকোরা সোমেশ্বরী নদীর ইজারা বহির্ভূত এলাকা, খাড়ামুড়া, রাঙ্গাজান, বালিজুরি, হালুয়াহাটি, জুকাকুড়া, আয়নাপুর, বাগেরভিটাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বিচারে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
বালুদস্যুরা এসব এলাকায় শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। নদীর পাড় ভেঙে ও বানের জমি ধ্বংস করা নির্বিচারে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, চলতি বাংলা সালে সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা মৌজার ৭,১৭ শতাংশ এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ১ বছর মেয়দে ইজারা দেয়া হয়।
তাওয়াকোচা গ্রামের ইউপি সদস্য রহমত আলী, ওই গ্রামের মহসিন আলী ও মোরশেদ আলমসহ গ্রামবাসিরা জানান, ১ বৈশাখ থেকে ইজারাদারের লোকজন লিজ এলাকায় বালু উত্তোলন শুরু করে ।
তাঁদের অভিযোগ ২ মাস বালৃ উত্তোলনের পর লিজ এলাকায় কোন বালু নেই। পরে ইজারাদারের লোকজন ইজারা বহির্ভূত শতশত একর এলাকা থেকে বালু লুটপাটে মেতে উঠে বালু খেকোরা।
বালু উত্তোলন নীতিমালা অনুয়ায়ী ইজারাকৃত নদীর তলদেশ থেকে উর্বর বালু উত্তোলন উত্তোলনের কথা থাকলেও ইজারাদারের লোকজন নীতিমালা ভঙ্গ করে নদীর পাড়, ফসলি জমি, বনবিভাগের সামাজিক বন ধ্বংস করে নির্বিচারে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে।
এতে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। শুধু তাই নয়, নদীর মাঝখানে বিশাল বিশালগর্ত করে অবাধে বালু লুটপাট চালানো হচ্ছে। বালু মহাল ইজারার বালু উত্তোলনের নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে ইজারা বালিতের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হচ্ছে না। এমন অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভাংচুর করা হচ্ছে বালু উত্তোলন যন্ত্র,জব্দ করা হচ্ছে অবৈধ বালু। শ্রমিকদের করা হচ্ছে জরিমানা। দেয়া হচ্ছে সাজা।
জানা গেছে, একদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে লুটপাট করা হচ্ছে বালু। আবার প্রশাসন চলে যাওয়ার পর সেখানে আবারও শুরু হচ্ছে বালু লুটপাট। স্থানীয়রা জানান প্রশাসনের অভিযানে শ্রমিকদের জরিমানা ও সাজা দেয়া হলেও বালু লুটপাটের সাথে জরিত গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ফলে সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসনের অভিযান থেকে রক্ষা পেতে বালু খেকোরা বেছে নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। দিনের বেলায় ড্রেজার মেশিন বাড়িতে উঠিয়ে রাখা হচ্ছে। রাতে শতশত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সারারাত বালু লুটপাট করা হচ্ছে। দিনের বেলায় উত্তোলনকৃত বালু মাহিন্দ্র ও ট্রাকে করে পরিবহন করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে জানা গেছে, প্রতিট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। একট্রাক বালু উত্তোলন খরচ হয় ১০ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সোমেশ্বরী নদী থেকে বর্তমানে প্রতিদিন অবৈধভাবে ৭০ থেকে ১২০ ট্রাক বালু লুটপাট করা হচ্ছে। দিনেরাতে ট্রাকে করে লুটপাট হচ্ছে বালু। অতিরিক্ত বুঝাই বালুর গাড়ি অবাধে যাতায়াতের কারনে সড়কও জনপদ বিভাগের সড়কসহ নদীর দুপাশের রাস্তাগুলো ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পরেছে।
বেপরোয়াভাবে বালু লুটপাটের কারনে নদীরপাড়, ফসলি জমি ও বন বিভাগের সামাজিক বনের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরছে। অন্যদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে।
তাওয়াকোচা ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা ইফাদ মোর্শেদ বলেন, সামাজিক বনের ক্ষতি সাধন করে বালু লুটপাটের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ বনবিভাগের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদও ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বালু লুটপাট বন্ধে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। করা হচ্ছে জরিমানা।
দেয়া হচ্ছে বালু উত্তোলনের সাথে জরিতদের সাজা। মঙ্গলবার ও সোমেশ্বরী নদীর বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের মতে শুধু ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু লুটপাট বন্ধ করা কঠিন হয়ে পরেছে।
তারা বলেন, অভিযান পরিচালনা করার জন্যেও সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সার্বক্ষণিক নদী পাহাড়া দিয়ে বসে থাকা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব না। তারা অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধে সীমান্তের বিজিবি, থানা পুলিশ, বনবিভাগের কর্মকর্তা ও সচেতন মহলের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।