এ এইচ নান্টু, রামপাল:
করোনা পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে প্রায় ছয় মাস ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এতে সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন খাতে রাজস্ব আদায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে। তবে বছরের অন্য সময়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এ আবাসভূমির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করে হাজার হাজার পর্যটক। অবশ্য বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবন নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সময় পেয়েছে। সুন্দরবনকে নতুনভাবে উপস্থাপনের জন্য ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সুন্দরবনে পর্যটক সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান জানান, প্রকল্পের আওতায় বনের পুরাতন সাতটি পর্যটন স্পটের অবকাঠামো সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের কালাবগি,আলীবান্দা,শেখেরটেক,আন্দারমানিক এলাকায় নতুন চারটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হবে। সেখানে বনের ভিতরে কাঠের সিঁড়ি, ওয়াচ টাওয়ার, বন্যপ্রাণী দেখার সুবিধা ও নদীতে ঘোরার জন্য ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিবছর সুন্দরবন দিয়ে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব। প্রতিবছর এখানে পৌনে দুই লাখের মতো পর্যটক আসেন। যার মধ্যে ৫ হাজারের মতো বিদেশি। বিগত ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটকদের ভিড় এতটাই বেশি ছিল যে, নিরাপত্তা দিতে বন বিভাগকে হিমশিম খেতে হয়েছে। ওই সময় করমজল, দুবলারচর, কটকা,হারবাড়িয়া, হিরণপয়েন্ট ও কচিখালী পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। এদিকে দীর্ঘ সময় সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছেন ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও ট্রলার মালিকরা। সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় বন ভবন ঘেরাও ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন। বন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এখানে পর্যটন খাতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মৎস্য ও গোলপাতা আহরণসহ অন্যান্য খাতে রাজস্ব আয় হয়েছে আরও প্রায় ৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক এসেছেন প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার। তবে করোনা প্রতিরোধে ১৯ মার্চ থেকে সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলে সবকিছু স্থবির হয়ে যায়।সংগঠনের আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন দেখার ভীষণ আগ্রহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। প্রতিবছর কয়েক লাখ পর্যটক ভিড় করতেন সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে পর্যটক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখনো পর্যটকশূন্য দর্শনীয় স্থানগুলো। ফলে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি চরম আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন লঞ্চ, ট্রলার মালিক, ট্যুর অপারেটরসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।