সাটুরিয়া প্রতিনিধি:
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তৃতীয় তালায় গত(১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু দিন ধরে গোপনে ধামাচাপা দিলেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়।
এ ঘটনায় একটি সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সাটুরিয়া হাসপাতালে ওই রাতে যারা ডিউটি করেছে তারা হলেন, ডাঃ স্বপন কুমার সুর,নার্স দুলালী,সুমি আক্তার ও ওয়ার্ড বয় আব্দুল মাজেদ আলী।
ধর্ষিতার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর আমার মেয়েকে জ্বর ও শরীর ব্যাথা নিয়ে সাটুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করি। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে ১২ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র (ছুটি) দিবে বলে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে নার্সরা জানায়। ১১ সেপ্টেম্বর রাত আনমানিক ১১ টার দিকে হাসপাতালের এক যুবক তাকে ধরে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। মেয়েটি এক পর্যায়ে জ্ঞানহীন হয়ে পরলে তাকে হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। এদিকে তরুণীর অতিরিক্ত রক্তক্ষনন হলে ওই রাতেই তাকে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্মরত চিকিৎসক।
এদিকে ধর্ষিতার মা মেয়েকে বেডে না পেয়ে সামনে এগিয়ে দেখেন বারান্দায় পরে আছে মেয়ে। কাছে গিয়ে দেখেন তার অতিরিক্ত রক্তক্ষণ হচ্ছে। এসময় ধর্ষিতার মা ডাক্তার নার্স ডাকলে নার্সরা ওই তরুণীর অবস্থা বেগতিক দেখে তরিঘরি করে ডাক্তার ডেকে আনেন। পরে চিকিৎসক ধর্ষিতাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে মানিকগঞ্জ ২৫০ শষ্যা হাসপাতালে গাইনি ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়।
ধর্ষিতার বাবা বলেন, আমি একজন হতদরিদ্র ও ভ্যান চালক। ধর্ষককে আমি ও আমার স্ত্রী চিনতে পারেনি। হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ওই ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে ধর্ষককে চিনা যাবে। আমি গরীব বলে মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করে মুখ বুঝে চুপ রয়েছি। মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করে কোন অভিযোগ করিনি বলে জানায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই সময় ডাক্তার বা নার্সদের ডেকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে কয়েকদিন ধরেই সাটুরিয়া হাসপাতাল পাড়ায় এনিয়ে চলছে কানাঘোঁষা। সিসি ক্যামেরা বেষ্টিত রোগীর বেডে কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে চলছে কানাঘোঁষা। তবে হাসপাতালের ভিতরে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কেউ মুখ খুলছে না।
কিছু মহিলা রোগী ও স্থানীয় মানুষ জানায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে নারীরা। তাদের নিরাপত্তা হাসপাতাল দিয়েছেন সিসি ক্যামেরায়। সিসি ক্যামেরায় দেখলেই ধরা পরবে ওই তরুণীকে কে ধর্ষণ করেছে। হাসপাতাল কর্কৃপক্ষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ না দেখে তরুণীর ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে মহিলা রোগী ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা। স্থানীয়দের অভিযোগ এর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মামুনুর রশীদ জানান, এ ঘটনায় শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাদিককে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। দুই কর্ম দিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালে ভিতরে এ ঘটনা যেই ঘটাক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাটুরিয়ার ইউএনও আশরাফুল আলম বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা তরুণীর ধর্ষণের ঘটনা নেক্কারজনক ও নিন্দনীয় । হাসপাতালের ভিতরে এমন ঘটনা ঘটলে নারী রোগীরা নিরাপত্তার কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে আসবে না। এমন ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। কেউ দোষী হলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।