নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা সোমবার (২ নভেম্বর)চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার অপহরণকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে প্রশাসনের প্রতি আইনের আওতায় আনার দাবি করেছে বিএমএসএফ। দ্রুত সময়ের মধ্যে সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের মূখোমুখি করা সারাদেশের সাংবাদিকদের প্রাণের দাবি। অন্যথায় সারাদেশের সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে নামারও হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম- বিএমএসএফের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে প্রশাসনের কাছে বলা হয়, সঠিক তদন্ত করে দোষিদের খুঁজে বের করুন। প্রভাবশালীদের অশুভ চক্রান্তে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তা সাংবাদিকরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সাংবাদিক হত্যা- নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নেই। এভাবে চলতে পারেনা।
বিএমএসএফ কেন্দ্রীয় কমিটির নবগঠিত আহবায়ক শহীদুল ইসলাম পাইলট ও সদস্য সচিব আহমেদ আবু জাফর সারাদেশে অব্যাহত সাংবাদিক অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন, লাঞ্ছিত ও বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সকল সাংবাদিককে স্বোচ্চার থাকার আহবান জানানো হয়।
এদিকে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গোলাম সরওয়ারকে অপহরনের পরদিন তার মোবাইল থেকে সহকর্মী এক সাংবাদিককে ফোন করে স্ত্রীর নাম্বার চেয়েছিল। প্রশ্ন থেকে যায় পুলিশ কেন ওই লোকেশনটি শনাক্ত করতে পারলোনা! চট্টগ্রামের সিনিয়র এক সাংবাদিক বলেছেন, গোলাম সরওয়ারের ঘটনাটি তাহলে কি ঝিকে মেরে বউকে বোঝানোর কোন গল্প? নাকি অপহরনকারীদের ক্ষমতা জানান দিতে এমন নাটকের অবতারণা করলো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরা বাজার এলাকার একটি খালের পাড়ে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় নগরীর ব্যাটারি গলি এলাকা থেকে ৪ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে।
স্থানীয় এক দোকানদার সরোয়ারকে খালে পড়ে খালি গায়ে পড়ে থাকতে দেখে আশপাশের সবাইকে ডেকে আনেন। পরে স্থানীয়রা সেখানে গেলে অজ্ঞান অবস্থাতেই বিড়বিড় করে বলতে থাকেন ‘আমি আর নিউজ করবো না, প্লিজ… আমি নিউজ আর করব না ভাই…। চার দিনের অমানবিক নির্যাতনের পর এমনভাবেই বাঁচার আকুতি করছিলেন সাংবাদিক সরোয়ার। তাছাড়া তার মুখ থেকে আর কোন কথাই বের হচ্ছিল না। শুধু উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করছিলেন তিনি।
পরে স্থানীয়দের বরাতে খবর পেয়ে এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন অজ্ঞান অবস্থাতেই নিজের পরিচয় দেন সাংবাদিক সরোয়ার। পরে সীতাকুণ্ড থানার ওসি এবং কোতোয়ালী থানার ওসি ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। সাংবাদিক সরোয়ারকে উদ্ধার করে বড় কুমিরা বাজার এলাকার ওই খালে পাড় থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টালে গোলাম সরোয়ার খুলশীতে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাসিনো ব্যবসা কিংবা ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় হয়তো তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গোলাম সরওয়ার উদ্ধারের ঠিক পরের মুহুর্তের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করছেন ৪ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া তরুণ সাংবাদিক। ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যাচ্ছে ৪ দিনের অমানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন গোলাম সরোয়ার। নির্যাতনের ফলে মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।
এদিকে আজ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী এমএম আকরাম হোসাইন জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। তবে গোলাম সরওয়ারকে অপহরণ ও নির্যাতন ঘটনা গোটা সাংবাদিকের জন্য উদ্বেগজনক। তাকে উদ্ধার স্বস্তির বিষয় তবে কারা এই অপহরন চক্রের সাথে জড়িত ছিল তা খুঁজে বেরর করা জরুরী। নয়তো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তার সাথে কথা বলা সম্ভব হচ্ছেনা। তার জ্ঞান ফেরার পর কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিটিনিউজ বিডির সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার। এ ব্যাপারে তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জুবায়ের সিদ্দিকি কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেছিলেন।