নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার বাইরে কারো মাইম্যান দিয়ে বলয় গড়তে দেয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। তিনি বলেন, আমাদের অনেকের মধ্যে এমন মানসিকতা আছে, যারা নেতৃত্বে থাকেন তারা মাইম্যান দিয়ে বলয় তৈরি করতে চান। আমরা বিভিন্ন জেলায় এটি দেখেছি। এই অভ্যাস পরিহার করতে হবে। আমরা সকলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। এখানে বলয় থাকবে একটাই, শেখ হাসিনার বলয়। শেখ হাসিনার বাইরে কারোর ব্যক্তিগত মাইম্যান, বলয় গড়ে ওঠতে দেয়া যাবে না।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল-২২ এ প্রধান অতিথির বক্তেব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল প্রতিদিন মিথ্যাচার করছেন। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির কথা বলেন। বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার কারণে জনগণের কাছে ধিকৃত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে মানুষ বিএনপিকে আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় বলা আছে, কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি বিএনপির কোনো নেতা হতে পারবে না। অথচ বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় তিনি বাসায় থাকছেন। তাদের আরেক নেতা তারেক রহমান আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়ে পলাতক। এসব কারণে তারা গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে ৭ ধারা বিলুপ্ত করে দিয়েছে। এর মানে যে যতো বড় দুর্নীতিবাজ হোক, এখন তাদের দলে নিতে কোনো সমস্যা নেই। তাদের মুখে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানায় না। আপনারা কোন মুখে দুর্নীতির কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য দেশের মধ্যে অশান্ত, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা। দেশের মানুষ ভালো থাকুক তারা চায় না, এ জন্য তারা উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী। তারা একাত্তরে পাকিস্তানের সৈনিক ছিলো। এখনো স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার হিসেবেই তারা আছে। তারা এখনো পাকিস্তানি আদর্শ বহন করে। বিএনপি-জামায়াত এ দু’টি দল স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। এদেরকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির সময় থেকেই জাতির পিতা বাঙালির মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেয়, তখন থেকেই তিনি প্রতিবাদ করেছেন। বঙ্গবন্ধু ১১ মার্চের হরতালে নেতৃত্বে দিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তখন থেকেই তিনি স্বাধিকার আন্দালন শুরু করেন। ’৬৯ গণঅভ্যুত্থানে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’’ এই নির্দেশনার পর থেকে দেশের নিয়ন্ত্রণ বঙ্গবন্ধুর হাত চলে গিয়েছিলো। সারা বাংলাদেশে ছিলো স্বাধীনতার পতাকা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি জানতেন, একসময় আমাদের স্যাটেলাইট প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আজ মহাকাশে স্যাটালাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আমরা মহাকাশ বিজ্ঞান যুগে প্রবেশ করেছি। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন করে গিয়েছিলেন। যার কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্রসীমায় মায়ানমনারের সঙ্গে মামলা করে বাংলাদেশ সমুদ্রে অধিকার ফিরে পেয়েছে। আজ সমুদ্রসীমায় উপকূল থেকে প্রায় ১ লাখ বর্গমাইল পর্যন্ত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমুদ্রের ব্লু ইকোনমি আগ্রামী প্রজন্মের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হবে।
কক্সবাজারকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের সবচেয়ে প্রাচীণ এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র, অর্থনৈতিক মুক্তি আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। শুধু স্লোগান নির্ভর হলে হবে না। বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তবেই কক্সবাজার নৌকার ঘাঁটি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হবে।
বাংলাদেশ চূড়ান্ত অর্থনৈতিক মুক্তির দাঁড়প্রান্তে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বাংলাদেশকে একসময় তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলা হতো। আজ আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, রিজার্ভ ফরেন রেমিটেন্স বেড়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এসবের জন্য একজন কৃতিত্বের দাবিদার, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। যার কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ নিয়েও উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যা শেখ হাসিনার সরকার করে দেখিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে যা উন্নয়ন হয়েছে এককভাবে কক্সবাজার জেলায় ১০টি জেলার বেশি উন্নয়ন হয়েছে। মাতারবাড়ি ডিপ সি পোর্ট হচ্ছে, আধুনিক স্টেডিয়ামের মতো বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে।