রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
রূপগঞ্জে জাহিদুল ইসলাম লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১১ গত ২১/০৭/২০২১ রূপগঞ্জ থানাধীন টেংরারটেক সাকিনস্থ এশিয়ান হাইওয়ে রোডের পশ্চিম পাশের মাল্টিব্রান্ড গ্রুপের বাউন্ডারি সংলগ্ন ডোবার মধ্যে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার খবর পাওয়ার পর গত ২৪/০৭/২০২১ হাসপাতাল মর্গে উপস্থিত হয়ে মোঃ কাজল হোসেন (২১) নামক এক ব্যক্তি লাশের আলোকচিত্র, লাশের পরনে থাকা কাপড় দেখে লাশটি তার বাবা জাহিদুল ইসলাম বলে সনাক্ত করে।ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরূদ্ধে নিহতের ছেলে মোঃ কাজল হোসেন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-৪০, তারিখ-২৫/০৭/২০২১।
জানাগেছে, তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উক্ত ক্লু-লেস ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। অতঃপর র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল কর্তৃক ১৬ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে উক্ত ক্লু-লেস ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী ১। মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩০), পিতা- মোঃ গফুর আলী, সাং- আদর্শগ্রাম, থানা-সাঘাটা, জেলা- গাইবান্ধা ও তার সহযোগী অন্যতম আসামী ২। মোঃ শামীম (৪০), পিতা- মৃত গিয়াস উদ্দিন, সাং- মসজিদপাড়া, থানা+জেলা- পঞ্চগড়; ৩। মোঃ রনি মিয়া @ টনি (৩০), পিতা- ইব্রহীম খলিল, সাং- দুর্গাপুর, থানা-সাঘাটা, জেলা- গাইবান্ধা; ৪। মোঃ আঃ মান্নান শেখ (২২), পিতা- মোঃ ইব্রহীম শেখ, সাং- অন্যদানগর, থানা- পীরগাছা, জেলা- রংপুর; ৫। মোঃ সুমন (৩৮), পিতা- মোঃ লস্কর প্রামাণিক, সাং- পুটিমারী, থানা-সিংড়া, জেলা- নাটোর; ৬। মোঃ মামুনুর রশিদ (৩৫), পিতা- মৃত তাইজ উদ্দিন, সাং- গালিমপুর, থানা-বাগাতিপাড়া, জেলা- নাটোর এবং ৭। মোঃ হাবিবুল্লাহ (৫২), পিতা- মৃত ইয়াছিন, সাং- চান্না বৌবাজার, থানা জয়দেবপুর, জেলা- গাজীপুর’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৮/০৭/২০২১ রাতে উক্ত অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা মোঃ সাইফুল ইসলাম ঢাকার কেরাণীগঞ্জ হতে এবং তার সহযোগী মোঃ রনি মিয়া গাইবান্ধা হতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় অবস্থানরত মোঃ শামীম, মোঃ আঃ মান্নান শেখ, মোঃ সুমন, মোঃ মামুনুর রশিদ ও মোঃ হাবিবুল্লাহসহ ০৯ জনের একটি দল সাইফুলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়। উক্ত চক্রের মূলহোতা সাইফুলের একজন অন্যতম সহযোগীসহ আরও ৫ জনের একটি দল নাটোর থেকে ০১টি ট্রাক নিয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এসে সাইফুলের দলের সাথে মিলিত হয়। ১৯/০৭/২০২১ তারিখ ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা ঘটনার দিন দুপুরবেলা কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ¡রোড এলাকায় এসে পৌছালেও তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সন্ধ্যার পর উক্ত অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা সাইফুল নিজে যাত্রীসেজে ঈদে ঘরমুখো সাধারণ যাত্রীদেরকে কম টাকায় পরিবহনের আশ্বাস দিয়ে ভিকটিম ১। জাহিদুল ইসলাম (৫০) সহ তার সঙ্গীয় ২। আলম (৫০), ৩। আরিফ (৩০), ৪। শরীফুল ইসলাম (৫০) ও ৫। সবুজ (৩০) সহ মোট ০৫ জন যাত্রীকে সু-কৌশলে তাদের ট্রাকে উঠিয়ে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা উল্লিখিত যাত্রীদের নিয়ে কিছুদূর আসার পরে পথিমধ্যে তাদের দেখিয়ে শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় ক্রয় করে। পরবর্তীতে তারা ট্রাকের সামনে পূর্ব থেকেই রাখা ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত অনুরুপ শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় সু-কৌশলে পরিবর্তন করে ট্রাক চলাকালীন সময়ে ভিকটিম জাহিদুল ইসলামসহ ০৪ জন যাত্রীকে খাইয়ে অজ্ঞান করে তাদের কাছে থাকা সবকিছু লুট করে নেয়। একজন যাত্রী উক্ত ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় না খাওয়ায় তাকে বেধড়ক মারধর করে। পরবর্তীতে উক্ত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রীজ পার হয়ে প্রথমে ০৩ জন যাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর কিছুদূর আসার পর অজ্ঞান না হওয়া যাত্রীকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। সবশেষে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন টেংরারটেক সাকিনস্থ এশিয়ান হাইওয়ে রোডের পশ্চিম পাশের্¡ ঝোপঝাড়ের মধ্যে ভিকটিম জাহিদুল ইসলামকে গড়িয়ে ফেলে দেয়। ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম এর নিকট টাকা পয়সা কম থাকায় সাইফুলের নেতৃত্বে আসামীরা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে উপুর্যপুরি কিল ঘুষি ও প্রচন্ড মারধর করে। ঔষধের বিষাক্ত প্রভাব এবং প্রচন্ড মারধর করার ফলে ভিকটিম জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয় বলে ধারনা করা হয়।
উল্লেখ্য, একই দিনে উক্ত চক্রটি গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ৩ জন ব্যক্তিকে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত কোমল পানীয় মিরিন্ডা খাইয়ে অজ্ঞান করে ১৩ হাজার টাকা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এক গরু ব্যবসায়ীকে একই কায়দায় অজ্ঞান করে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার লুট করে নেয় বলে স্বীকার করে।
এবিষয়ে র্যাব-১১’র লেঃ কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।