রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত ফি আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবার শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত ফি বিজ্ঞান বিভাগে ১ হাজার ৯৭০ টাকা ও বাণিজ্য ও কলা বিভাগে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। কিন্তু কোন বিদ্যালয়ই তা মানছে না। কোন কোন বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ তিন গুণ টাকা আদায় করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পূর্বগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হাটাবো আর্দশ বিদ্যালয়, ছাত্তার জুট মিল উচ্চ বিদ্যালয় সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসির ফরম পূরণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রেজিষ্ট্রেশন ফি, কোচিং ক্লাস, স্কুল উন্নয়ন ফি, বিদ্যুৎ ফি, মিলাদ, কেন্দ্র ফি, কেন্দ্রের বিশেষ সুবিধা ফি সহ বিভিন্ন নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে। অভিবাবকরাও বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করছেন। কেউ কেউ মহিলাদের স্বর্ণালংকার কেউবা গৃহপালিত গরু ছাগল বিক্রি করে টাকার জোগন দিচ্ছেন আবার কেউবা সমবায় সমিতি, এনজিও সহ সুধের উপর টাকা নিয়ে ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যালয়গুলো কোন অজুহাতেই ফরম পূরণের টাকা কমাতে রাজি হচ্ছে না। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তারা জানিয়ে দিচ্ছে এ বছর নয় আগামী বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অপরদিকে এ বিষয়ে মুখ খুললে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকজন শিক্ষক ওইসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নানা জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় না করতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। বিষয়টি শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন। নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ কোন প্রতিষ্ঠান আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে জানানো হয়েছে।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বোর্ড অথচ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে শারিরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা ধারাবাহিক মূল্যয়নের মাধ্যম স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন হবে বিধায় এ দু’বিষয়ে বোর্ড ফি দিতে হবে না বলেও জানানো হয়। এসবের কোনটিই মানছে না বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। এ বছর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তন্মধ্যে ৫৯ জন ছাত্রী ও ৫৭ জন ছাত্র রয়েছে। তাদের ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা জাহিমা পারভীন রিমা ও সহকারী শিক্ষক মুকুল হোসেন। তাদের সহযোগিতা করছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অর্থলোভী সদস্য ও শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিক্ষার্বোড নির্ধারিত বিজ্ঞান শাখায় ১ হাজার ৯৭০টাকার স্থলে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা আদায় করছে। কলা ও বাণিজ্য শাখায় ১ হাজার ৮৫০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় অনেক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলেও শিক্ষক জাহিমা পারভীন রিমা ও মুকুল হোসেন হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুকুল হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহিমা পারভীন রিমা সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের কথা চিন্তা করেই অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের সংসার অভাব অনটনে চলছে। পত্রিকায় লিখলে কিছু হবে না। কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই আমাদের কাজ করতে হয়।
পূর্বগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান বলেন, সহকারী শিক্ষক জাহিমা পারভীন রিমা ও খোরশেদ আলম মুকুলের বিরূদ্ধে এমন অভিযোগ আমিও পেয়েছি। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে অবহিত করা হবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান খানের মোবাইল ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি সরকার নির্ধারিত ফি ব্যতিত কোন প্রকার অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না এবং যারা আদায় করার চেষ্টা করবে ও বকেয়া ফি পরিশোধের জন্য শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে তাদের বিরূদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমার কাছে এবং ইউএনও মহোদয়ের কাছে পূর্বগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা জাহিমা পারভিন রিমা ও শিক্ষক খোরশেদ আলম মুকুলের বিরূদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।