নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর আড়াই ঘটিকার সময় ২২/১, তোপখানা রোড, বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে “বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ১১তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদারসহ নির্বাচিত ৫৫ জন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অভিষেক অনুষ্ঠান” অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোসাদেক হোসেন স্বপন, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী সায়ীদুর রহমান, কার্যকরী সভাপতি সাইফুল আলম মানিক, সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর, বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. ইসলাম আলী, বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোঃ শামছুল আলম, বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ফেডারেশনের সভাপতি রবীন্দ্র নাথ বর্মন, বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিচালক মোঃ আবুল হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত এবং সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ০১/০৪/২০২১ইং তারিখ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান করোনার কারণে করতে পারিনি। আজ ০৪/১১/২০২১ইং তারিখ কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি। এ অনুষ্ঠানে দেশের মৎস্যখাতের শ্রেষ্ঠতম ৫টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছে। (১) বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ (২) বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি (৩) বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড (৪) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি (৫) বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ফেডারেশন। আমাদের মনে হচ্ছে এ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে মৎস্যজীবী জেলে সম্প্রদায়ের একটি জাতীয় মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এ সভা আশা করে আগামী দিনে মৎস্যজীবীদের যে সমস্যা ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান করা হবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান মৎস্যজীবীবান্ধব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারে এসেই মৎস্যজীবীদের জন্য ৪০ কেজি করে চাল, ১০ হাজার করে টাকা, মৎস্য আহরণের জন্য ফাইভার বোর্ড, জাল লাইফ জ্যাকেট, জলমহাল নীতিমালা সংশোধন, মৎস্যজীবী জেলেদের পেশার স্বীকৃতি দিয়ে তাদের এফ আইডি কার্ড দিয়েছেন। মৎস্য মন্ত্রণালয় ও মৎস্য বিভাগ জেলেদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মৎস্য সম্পদ ও মৎস্যজীবীদের একটি দারুন সংকট সময় চলছে। আপনি জানেন যে, প্রতিটি নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে এর ফলে দেশীয় নদীতে মাছের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাগর ও নদীর মোহনাগুলো পলি পড়ে ভরাট হওয়ার ফলে কোন মাছ সাগর থেকে নদীতে ঢুকতে পারে না এবং প্রতিটি মোহনায় খুটাজাল, নেট জাল, রাক্ষুসে জাল, বেহেন্দী জাল পাতার কারণে ঢুকতে পারে না। যদিও ঢুকতে পারত ঐ জাল পাতার কারণে একেবারেই ঢুকতে পারে না। বেকারত্বের কারণে দিন দিন জেলে সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যারা প্রকৃত জেলে তারা দিন দিন পেশা হারাচ্ছে। এর ফলে সরকারের মৎস্য আইন ও নীতিমালা উপেক্ষিত হচ্ছে। আমরা মনে করি একটি যুগউপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। তা না হলে দিনের পর দিন মৎস্য সম্পদ হারিয়ে যাবে। বেকার হবে দেশের লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবী। বাংলাদেশের উজানে ভারত নদীগুলোয় বাঁধ কারণে উত্তর বঙ্গের ১৬টি জেলায় শুকনো মৌসুমে কোন জলমহালে পানি না থাকায় প্রায় ৩ লক্ষ মৎস্যজীবী ঐ সময় বেকার হয়ে যায়। ঠিক তেমনী আস্তে আস্তে দক্ষিণ অঞ্চল ও পূর্ব অঞ্চল ঐ রূপ ধারণ করছে। তৎড়িত গতিতে এর একটি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আপনি জানেন মৎস্যজীবী জেলেদের বর্তমান দুরাবস্থার কথা। অনেকের জমি নেই, ভেড়ী বাঁধের পাশে ঘর তৈরী করে বসবাস করে। সরকারী সহায়তা যেটুকু মৎস্যজীবী জেলেদের নামে বরাদ্দ হয় সেটুকু নিয়ে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিভিন্ন অকেশনে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। সে সময় ৫ লক্ষ মৎস্যজীবী জেলে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে যায়। মৎস্যজীবী জেলে পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করে। আমরা এর অবসান চাই। এর প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত দাবী সমূহ পেশ করছি।
০১। সকল নদীর মোহনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে। মৎস্য বিভাগের সকল পর্যায়ের প্রকল্পে মৎস্যজীবী জেলে সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং জেলেদের রক্ষার সার্থে মৎস্য বিভাগ ও বিভিন্ন বাহিনী দীর্ঘদিন থেকে আপরেশনে যে সকল মাঝি ব্যবহার করেন তাদের বাতিল করে তাদের মন মতো নতুন মাঝি নিয়োগ করতে হবে।
০২। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সুদমুক্ত ঋণ, বদ্ধ জলমহালের ইজারা প্রথা বাতিল করে বদ্ধ জলমহালে আয়তন ঠিক রেখে টোকেন ফি’র মাধ্যমে প্রকৃত মৎস্যজীবী জেলেদের সংগঠনের নামে বরাদ্দ দিতে হবে। মৎস্যজীবী জেলেদের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে ও মৎস্যজীবী জেলেদের এফ আই ডি কার্ড সংশোধনে মৎস্যজীবী জেলে সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
০৩। ভূমিহীন মৎস্যজীবী জেলেদের নামে খাস জমি বরাদ্দ দিতে হবে ও জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সাতক্ষীরাকে জাটকা জোনের আওতায় আনতে হবে।
০৪। খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা অঞ্চলের আলোর কোল, দুবলাচর, সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ’র আওতায় আনতে হবে। এফ আই ডি কার্ডধারী জেলেদের সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে পারমিট দিতে হবে।
০৫। মৎস্যজীবী জেলেদের ভিজিএফ বিতরণে দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ভিজিএফ দিতে হবে ও বাংলাদেশের সকল জেলায় মৎস্যজীবী জেলেদের খাধ্য সহায়তা দিতে হবে। কক্সবাজার জেলাকে জাটকা জোনের আওতায় আনতে হবে।
০৬। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস জলদুস্য ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে নিহত জেলে পরিবারকে ৫লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা ও নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলের নামে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকার জীবন বীমা চালু করতে হবে।