নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে যে ঘৃনিত গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সেই হামলার মূল হোতাদের বাঁচাতেই তৎকালীন চার দলীয় জোট সরকার জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল বলে দাবি করেছেন জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি (জেএসপি) এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু।
শনিবার (২১ আগস্ট) নয়াপল্টনের ‘‘নৃশংস ২১ আগস্ট স্মরণে’’ জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. মিজানুর রহমান মিজু বলেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মাঠে কত কথাই বলেন একে অপরকে। কিন্তু পুরো প্রশাসনকে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করে ২১ আগস্টের বিচারকে প্রভাবিত করতে একটি মিথ্যাকে সত্য বলে চাপিয়ে দেয়া কোনো সভ্য সমাজের সংস্কৃতি হয়ে উঠতে পারে না। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের এহেন অপতৎপরতার বিষয়টি পরবর্তীকালে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। যদিও তাদের এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ২১ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত অধ্যায়। সে দিন যা ঘটেছিল তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে নৃশংস ও নিকৃষ্টতম অধ্যায়। সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দেড় দশক পেরিয়ে গেলেও সেই বিকালের রক্তের ক্ষত প্রতিটি মানুষের মনে এখনও দগদগে।
তিনি আরো বলেন, প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করার পরও শাস্তি এড়ানোর সব পথই করে দেয়া হয়েছিল হামলাকারীদের৷ মূল হামলাকারীদের বাঁচানোর পরিকল্পনা থেকে এক সাধারণ মানুষ ‘জজ মিয়া’-কে করা হয়েছিল প্রধান আসামী৷
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ২১ আগস্টের হামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত করা হয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। রাজনীতি ভয়াবহভাবে দুর্বৃত্তায়িত হলেই এটি সম্ভব। এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ন্যায়বিচারের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও সজাগ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা ছাড়াও দলের ভেতর থেকে প্রতিহিংসার উপাদান দূর করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনীতি থেকে দূর করতে হবে অপশক্তি ও অপচিন্তা।
তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার আড়ালে প্রকৃত সত্য কী ছিল, দেশবাসীর সামনে তা উদ্ঘাটন সময়ের দাবী। ২০০৪ সালে ওই ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলার সময় যারা সরকারে ছিলেন তারা কিছুতেই এর দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, সরকার বা রাষ্ট্রের মদদ ছাড়া এবং দেশ বা বিদেশের কোনো না কোনো সামরিক উৎস ছাড়া এত বিপুলসংখ্যক আরজিএস গ্রেনেড অসামরিক জনসমাবেশে নিক্ষিপ্ত হতে পারে না। আর ওই গ্রেনেড হামলার পর ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা একটি অপরাজনীতি ও নোংরা মানষিকতারই বহি:প্রকাশ মাত্র।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ সভাপতি এম এ জলিল, গণআজাদী লীগের মহাসচিব মুহম্মদ আতাউল্লাহ খান, কৃষক-শ্রমিক পার্টি সভাপতি মো. সিরাজুল হক, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম মোস্তফা কামাল, দলের উপদেষ্টা প্রীতি শর্মা, ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সুভাষ চন্দ্র, যুগ্ম মহাসচিব সি এম মানিক, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।