নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জিতেছে আর হেরেছে দেশের ভোটাররা। ভোট দিতে না পেরে ভোটাররা রাস্তায় কান্না করছে, এটা মেনে নেয়া যায়না। তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রয়োজনে প্রাণ দেবো কিন্তু মাথা নত করবো না।
আজ মঙ্গলবার জাপার বনানী কার্যালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে প্রহসন চলছে। আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
বাবলু বলেন, নির্বাচনে ইভিএম মেশিনে শতভাগ ভোট পড়ছে, এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ইভিএমকে আওয়ামী ইভিএম-এ পরিণত করা হয়েছে। ইভিএম নয়, ইভিএম পরিচালনায় জড়িতদের পবির্তন করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামীতন্ত্র আর গণতন্ত্র এক সাথে চলতে পারেনা। জাতীয় পার্টি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনীতি করছে। গণমানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে জাতীয় পার্টি কখনো মাথা নত করবেনা।
জাপা মহাসচিব বলেন, প্রহসণের নির্বাচন বন্ধ করতে আমাদের সংগ্রাম চলবে। ভোটের নামে সন্ত্রাস হচ্ছে, নৈরাজ্য হচ্ছে, কেন্দ্র দখল হচ্ছে, মানুষের প্রাণহানী ঘটছে- এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচনের নামে সন্ত্রাস, হানাহানী আর খুনোখুনি বন্ধ করে ডিজিটাল গেজেটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করুন। তাতে দেশ নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, সৈয়দপুর পৌরনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে আমরা অনুরোধ করেছিলাম।তারা সবাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও হয়েছে পুরোই উল্টো। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চান কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের লাজ-লজ্জা থাকলে তাদেরই উচিত সিদ্ধান্ত নেয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ভোটাধিকার হচ্ছে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার তাই জাতীয় পার্টি গণমানুষের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে যাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাসে মানুুষ কথা বলতে পারেনা। গণমাধ্যম প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে পারছেনা। এছাড়া যে আইনে মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার লঘিংত হয় সে আইনের পরিবর্তন চাই আমরা।
বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে কিনা তা আগামী প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
এসময় সদ্য সমাপ্ত সৈয়দপুর পৌর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোঃ সিদ্দিকুল আলম (সিদ্দিক) বলেন, মাত্র দুই ঘন্টার ভোটে প্রায় ১০ হাজার ভোট পেয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে বুঝতে পারছেন জাতীয় পার্টি কত ভোট পেতো। তিনি বলেন স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সরকার পরিবর্তন হয়না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করে নিজেরাই তাদের ভাবমুর্তি নষ্ট করেছে। জোর করে জাতীয় পার্টির বিজয় কেড়ে নেয়া হয়েছে সৈয়দপুর পৌর নির্বাচনে।
এসময় জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব এটিইউ তাজ রহমান বলেন, প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন কমিশন মেরুদন্ডহীন। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা কার্টুনের মত আচরণ করছে। আর পুলিশ প্রশাসনের আচরণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের মত। এভাবে চলতে থাকলে সরকারী দল আর কোন নির্বাচনে প্রার্থী পাবেনা।
পার্টির অপর অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে গণতন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ইভিএম দিয়ে কারচুপি সহজ যদি প্রশাসন পক্ষে থাকে। নির্বাচনে প্রার্থী, প্রার্থীর মা এবং স্ত্রীর সাথে অসদ্বাচরণ করেছে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মেজর অব. রানা মোঃ সোহেল এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, এইচ.এম. শাহরিয়ার আসিফ প্রমুখ।