মো.মহসিন রেজা, পদ্মা শরীয়তপুর থেকে।।
পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের ২১ জেলার কয়েক কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুভ উদ্বোধন হলো পদ্মা সেতু। ২৫ জুন প্রথমে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও পরে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে ফলক উন্মোচন করেছেন প্রধানন্ত্রীর শেখ হাসিনা।
পদ্মার উত্তাল বুকে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন, স্বপ্নপূরণের আগেই এই দেশের ঘাতক-দালালরা পরিবার সহ বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাই বলে তার স্বপ্ন কে থামিয়ে রাখতে পারেনি। পিতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন তার সুযোগ্য কন্যা জন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের জনগনের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে (২৫ জুন) শনিবার বেলা ১১ টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সকাল দশটায় মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়ার মাঠে সাড়ে তিন হাজার সুধীজনের উপস্থিতিতে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হন এবং পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এ সময় সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত , বিশিষ্ট নাগর এবং মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিক বৃন্দ। প্রথম ধাপে পদ্মা সেতুর ফলোক উন্মোচন শেষে দুপুর বারোটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরসঙ্গী সহ যানবাহন যোগে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল নিজ হাতে দিয়ে জাজিরা শিবচর প্রান্তে পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় ফলক উম্মোচন এর জন্য সুধী সমাবেশে উপস্থিত হন। দুপুর ১২.৩৬মিনিটে জাজিরা, শিবচর প্রান্তের পদ্মা থানাসংলগ্ন ,পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের টোলপ্লাজার সাথে প্রায় ৩০ হাজার লোকের সুধী জনের উপস্থিতিতে পদ্মা সেতুর ফলক ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ফলক উন্মোচন শেষে জননেত্রী শেখ হাসিনা তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বলেন যারা পদ্মা সেতু নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তারাই এই পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে। যারা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সাথে যাদেরকে জড়িয়ে ছিল, তারা আজ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তারা আজ ভুলে গেছে ষড়যন্ত্র করে এই জাতিকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বাংলাদেশের জনগণ আমার সাহসের ঠিকানা। এই দেশের জনগণকে আমি আজ সেলুট জানাই।
পরে প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের শিবচরে জনসভা করেন।
রবিবার ২৬ জুন ভোর ছয়টা থেকে এই পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।
২০২১ সালের ৪জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে পদ্মার উত্তাল বুকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন।পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে ৪১টি পিলারের উপর ৪২টি স্প্যান বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর পাইলিং এর গভীরতা ১২২ মিটার। পদ্মা সেতুর পাইলিং করতে ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ধরনের হাইড্রোলিক হেমার ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর পাইলিং এর কাজে জার্মানির তৈরি ক্ষমতা সম্পন্ন হাইড্রোলিক হ্যামার ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার । পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।এসব খরচের মধ্যে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন ভাতা ইত্যাদি।
৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু নির্মাণের এ কাজটির ঠিকাদারি ছিলো প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
বাংলাদেশ অর্থ বিভাগের সাথে সেতু বিভাগের চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।