অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে সফল বলে উদযাপন করছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য ধনী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে চীনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এমনটাই দেখা গেছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয়, যে দেশগুলোতে করোনাভাইরাসজনিত অসুস্থতা, মৃত্যু এবং সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সে দেশগুলোতে চীনের প্রতি আস্থাহীনতা আরো তীব্র হয়েছে।
এই বছর চীন নিয়ে করা মতামত জরিপটি বলছে, চলতি বছর গত বছরের তুলনায় চীনের প্রতি আস্থাহীনতা বেড়েছে। সমীক্ষা চালানো দেশগুলোর প্রতিটিতেই চীন সম্পর্কে প্রতিকূল মতামত বেশি রয়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, জার্মানি, ইতালি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোসহ ১৪টি দেশ নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপের ফলাফলগুলো দেখায় যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সম্পর্কে কতটা নেতিবাচক মতামত বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের এ ধরনের সতর্ক মনোভাব বেইজিংয়ের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সিডনির লোয় ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো ও সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কূটনীতিক নাতাশা কাসাম বলেছেন, জনমত হলো শক্তিশালী বাধা। আমরা অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় ক্ষেত্রেই দেখতে পাচ্ছি; উদাহরণস্বরূপ চীন সম্পর্কে সরকারকে বিশেষভাবে সোচ্চার হওয়ার জন্য জনগণের মতামত শক্তিশালী চালক হিসেবে কাজ করেছে।
অনেক পশ্চিমা দেশে করোনাভাইরাস সংকট চীন এবং চীনের গর্বিত কর্তৃত্ববাদী নেতা শি সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগকে আরো গভীর করেছে বলে মনে হয়। সমীক্ষা চলানো ১৪টি দেশজুড়ে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬১ শতাংশ উত্তর দিয়েছেন। তারা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় চীন খারাপ কাজ করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের সমীক্ষার তুলনায় এ বছর চীন সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বেড়েছে ১৩ শতাংশ পয়েন্ট। জুন ও জুলাইয়ে জরিপ করা এক হাজার তিনজন আমেরিকান উত্তরদাতাদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশের কাছাকাছি বলেছে যে তাদের এখন চীন সম্পর্কে কিছুটা বা খুব বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শির উদ্দেশ্যগুলোর ওপর অবিশ্বাস নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। জরিপ করা প্রতিটি দেশেই তা বেড়েছে। তবে জাপান ও স্পেন বাদে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং বেশ কয়েকটি পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশের প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা বলেছেন যে শির প্রতি তাঁদের ‘কিছুতেই আস্থা নেই’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জেসিকা চেন ওয়েইস চীনের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, দমন-পীড়নের প্রতি চীনে দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতার কারণে এই অনুভূতিটি মানুষের মনে অটলভাবে বহাল থাকবে। যতক্ষণ না দেশটির অগ্রাধিকারের আদেশ যথাযথভাবে অব্যাহত থাকবে, ততক্ষণে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে বিদেশে জনমতগুলো নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে দেওয়া সত্যিই কঠিন হবে।
এদিকে চীনের প্রতি বিরূপ মনোভাব বাড়ছে অস্ট্রেলিয়ায়ও। দেশটিতে গত বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। দেশটিতে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮১ শতাংশ মানুষ জানায়, তারা চীনকে খারাপভাবে দেখে। তবে দুই বছর আগেও অস্ট্রেলিয়ার জনগণ চীনের অর্থনীতিকে ভালো চোখে দেখত বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান গবেষক নাতাশা কাসাম। মহামারি নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া অস্ট্রেলিয়ায় সংশয়বাদকে আরো গাঢ় করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চীনের সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শেন ডিঙ্গলি বলেছেন, করোনার শুরুতে আমরা প্রথম কয়েকটা ভীতিকর সপ্তাহ পার করেছি, সেটি অনেক চীনা নাগরিকই মনে হয় ভুলে গেছেন। তবে অন্য দেশগুলোর নাগরিকরা তা ভোলেনি। চীন আরো একটু নম্র হলে ভালো হয়।
পিউ সমীক্ষা সাধারণত এশীয়, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার আরো অনেক দেশকে কাভার করে, যেখানে জনসাধারণ প্রায়শই চীন সম্পর্কে আরো আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য মুখোমুখি ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সমীক্ষার আন্তর্জাতিক কিছু সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন পিউ রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র গবেষক লরা সিলভার।
সমীক্ষাটি টেলিফোনে পরিচালিত হয়েছিল। ফোন কলে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে আলোচনা। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা নেতারা কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারেন যে পিউ সমীক্ষায় অনেক উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রের করোনা মোকাবেলা নিয়েও ম্লান দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৪টি দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যথোপযুক্ত কাজ করেনি।
চীনা অধ্যাপক শেন ডিঙ্গলি বলেছেন, সব শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর এটি। করোনায় মারা যাওয়া দুই লাখ ১০ হাজার আমেরিকান মানুষকে বোঝাতে চীনকে ব্যবহার করা যাবে না।
সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।