নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আমাদের কথিত অভিজাত, বিত্তবান শ্রেণি, ‘প্রগতিবাদী’ রাজনীতিক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বাঙ্গালির জাগরনের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখনও উপেক্ষিত বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, নির্মম হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আজও জাতীয় কবি হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি কাজী নজরুল। সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তার নাম নেই। অথচ জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানেও নজরুলের পরিচয় দেওয়া হয় জাতীয় কবি হসেবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো দলিল নেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কাছেও।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় জনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের একদল উচ্চমার্গের সুবিধাবাদী কবি, সাহিত্যিক, পণ্ডিত মনে মনে হিসাব করেন, নজরুল চর্চা করে চট করে প্রগতিবাদীর তকমা অর্জন করা কঠিন। তাই তারা এপথে হাঁটেন না। যতটুকু হাঁটেন তা নিছকই লোক দেখানোর জন্য হাঁটেন।
তিনি আরো বলেন, কাজী নজরুল যত সংখ্যক শ্যামা সঙ্গীত, ভজন, কীর্তন রচনা করেছেন তা করতে পারেননি কোনো পুরোহিত, আর যত ইসলামি গান রচনা করেছেন তা রচনা করতে পারেননি কোন মাওলানা, ইসলামি চিন্তাবিদ, কবি। আর এটা করেই কাজী নজরুল যেন তাঁর জাত খুঁইয়েছেন। এজন্য না মুসলমান তারে ভালভাবে নেয়, না হিন্দু তারে আপন ভাবে। আর ধর্ম মানেই বিষ বলে যারা বিশ্বাস করেন তাদের কাছে নজরুল অনেক দূরগাঁয়ের কেউ।
তিনি বলেন, বাংলার অন্য কোন কবি তাদের গানে, কবিতায়, প্রবন্ধ, ভাষণে, এবং ব্যক্তিজীবনে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা, চেতনার কথা এত স্পষ্ট করে, সাহসের সাথে উচ্চারণ কিংবা চর্চা করেন নি। বাঙালীর ধর্ম, তার ধর্মচর্চার ভেতরের অসঙ্গতিকে নজরুলের মত কেউ আঘাত করেন নি। সাধারণ মানুষের পক্ষে, অন্যায়, অসুন্দর, অকল্যাণ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নজরুলের মত বিরামহীন কেউ লিখেনও নি।
জাতীয় জনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদারের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব কবি এনামুল হক কাফির সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাতীয় নারী আন্দোলনের সভাপতি মিতা রহমান, অগ্রগামী মিডিয়া ভিশনের নির্বাহী পরিচালক গোলাম ফারুক মজনু , জাগো বাংলাদেশ শিশু-কিশোর ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ জামাল শিকদার প্রমুখ।
এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, যদিও নজরুলকে জাতিরাষ্ট্রের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা কঠিন। তিনি সমগ্র মানবাত্মার মুক্তির গান গেয়েছেন। নিজের কবিতাকে ঔপনিবেশিক বৃটিশ ভারতের মুক্তির রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক শ্লোগান করে তুলেছিলেন।
নারী নেত্রী মিতা রহমান বলেন, সবকিছুকে ঘিরেই নজরুল আমাদেরকে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের প্রেরণাদায়ী রচনা সম্ভার রেখে গেছেন। এ জন্য একমাত্র নজরুল ইসলামও আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক চেতনা ও স্বাতন্ত্রের মূল স্তম্ভ ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম, মৃত্যু বার্ষিকীর আলোচনায়, তাঁর কবিতা, গান চয়নে চেনা কিছু প্রেমের গান, কমন কিছু ইসলামী গানকেই বারবার সামনে এনে নজরুলকে খণ্ডিত ভাবে উপস্থাপন করা হয়। আড়াল করা হয় তার দ্রোহ, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক চেতনাসমৃদ্ধ লেখাগুলোকে, জীবনাচার, জীবনদর্শনের অধ্যায়গুলোকে। যে অংশে বাস করেন প্রকৃত নজরুল, অসাম্প্রদায়িক, মানবতার নজরুল, সেই অংশকেই।