বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনা কারী জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ছাতিনালী এলাকার মৃত ইউনুছ আলী মন্ডলের ছেলে ০৮ নং আওলাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক (৫০)ও একই এলাকার মৃত আব্দুল মালেক মন্ডল ছেলে এমদাদুল হক (৪৮), এবং দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষ্ণপুর মরিচা গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে ড্রাইভার এমদাদুল হক (৪৫)।
জানা যায়, ভিকটিম ফারহানা আক্তার ওরফে চুমকি তার স্বামী মুদি ব্যাবসায়ী এজাজুল হক ওরফে সনির সাথে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানাধীন বর্গাহাটি এলাকায় ৩/৪ বৎসর যাবৎ বসবাস করে আসছিলো। কিন্তু তার স্বামীর দোকানটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন কামদিয়া বাজারে হওয়ায় ব্যবসা শেষে বাড়ি ফিরতে প্রতিদিন রাত্রী অনুমান ১১টা বেজে যেত। সেই সুযোগে চুমকির সহিত আসামী রাজ্জাক এর প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক গড়িয়া ওঠে এবং তারা ২০২০ সালে গোপনে বিবাহ করে। এরপর রাজ্জাক এর পরিবারে উক্ত বিবাহকে কেন্দ্র করে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং ভিকটিম ও আসামী রাজ্জাকের মধ্যে মনোমানিল্য সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার এক পর্যায়ে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে সম্মানহানি হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে চুমকিকে হত্যা করেছ তার দ্বিতীয় স্বামী আব্দুর রাজ্জাক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ।
হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুস ছালাম জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর দিনাজপুর জেলা সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে আমাদের বিশেষ টিম ঘোড়াঘাট থানা সহ, জয়পুরহাট জেলা, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা অভিযান শুরু করি। এর এক পর্যায়ে ফারহানা আক্তার চুমকিকে হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত একটি নোহা মাইক্রোবাস যাহার রেজি নং-ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৯৭৯৬ গত মঙ্গলবার (১লা আগস্ট) জয়পুরহাটের সদর থানা এলাকা হতে উদ্ধার করা হয়। একই তারিখ ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি ঘোড়াঘাট থানা এলাকা হতে উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২ আগস্ট অত্র মামলার তদন্তে প্রাপ্ত ঘটনার সহিত জড়িত আসামী এমদাদুল হক (৪৮) কে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করিলে সে স্বেচ্ছায় মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে জবান বন্দি প্রদান করেন। এর পরদিন ৩ আগস্ট জয়পুরহাট জেলায় অভিযান পরিচলানা করে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তদন্তে প্রাপ্ত আসামী পাঁচবিবি থানার ০৮ নং আওলাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক (৫০) এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত নোহা মাইক্রোবাসের ড্রাইভার এমদাদুল হক (৪৫) কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সকলে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে।
এ ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, এই ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে এবং আরও তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত আমরা হত্যারকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তদন্ত শেষ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্ল্যেখ, গত২৮ জুলাই শুক্রবার সকাল অনুমান সাড়ে ৮টার সময় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ১নং বুলাকিপুর ইউপির সিংগানালা গ্রামস্থ মোজাম্মেল হক এর আমবাগানের কোণায় একজন অজ্ঞাতনামা মধ্যবয়সী মহিলার লাশ পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। থানা পুলিশ ও পিবিআই টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অজ্ঞাতনামা মহিলার পরিচয় সনাক্ত করে চুমকির পিতা মামলার বাদী মোখলেছুর রহমান কে সংবাদ প্রদান করলে তিনি উক্ত ঘটনার বিষয় এজাহার দায়ের করেন।