নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল আর্তমানবতার সেবায় নেমে এসেছেন রাস্তায়। জীবনের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সূধীমহল ত্রাণ বিলিয়ে যাচ্ছেন অকাতরে।
কিন্তু ত্রাণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র সর্বত্রই চোখে পড়ছে। অরাজক-বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিটি স্পটে। নগরীতে খানপুরে সকালে ত্রাণ নিয়ে একই ব্যক্তি দুপুরে ইসদাইরে ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিচ্ছেন। কেউ কোথাও ত্রাণই পাচ্ছেন না।
কেউ ত্রাণ সংগ্রহ করে ঘর ভরে ফেলেছেন; কেউবা ঘরে বসে থেকে ছেলেমেয়ে নিয়ে উপোস করছেন। কারো কাছে হাত পাততে যান না। এমন চিত্র চোখে পড়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে।
বিশেষ করে ইসদাইর, উত্তর চাষাড়া, খানপুর, মাসদাইর, গাবতলী, আফাজনগর, মাসদাইর গুদারাঘাট, পশ্চিম মাসদাইর, বারৈভোগ, আদর্শনগর, পশ্চিম দেওভোগ পানির ট্যাংকী, মাদ্রাসার শেষমাথা, বেপারীপাড়া, তাঁতীপাড়া, বাবুরাইল, ভূঁইয়াপাড়া, বউবাজার, পশ্চিম নগর, লিচুবাগান, আমবাগান, বাংলাবাজার, দেওয়ান বাড়ি, খিলমার্কেট, গলাচিপা, রূপার বাড়ি, দাতা সড়ক, দেওভোগ পাক্কা রোড, নন্দিপাড়া, গোয়ালপাড়া, পাইকপাড়া, নিতাইগঞ্জ, ঋৃষিপাড়া ও আশপাশ এলাকায় ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ দিনে দিনে জোরালো হচ্ছে।
বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট চাকরি, বেকার, টিউশনি করে জীবনযাপনকারী ) লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে না পারায় নিদারুণ কষ্টে পড়ে গেছেন। রিক্সাচালক, পরিবহন শ্রমিকদেরও একই দশা।
অথচ প্রতিদিন নগরীতে ত্রাণ বিতরণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ গ্রামে এখনো ত্রাণ বিতরণ শুরু না হলেও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে শহর এবং শহরতলী পর্যায়ের চিত্র একই। যারা ত্রাণ পাচ্ছেন তারা প্রতিদিন পাচ্ছেন; যারা পাচ্ছেন না তারা কোথাও পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষে ত্রাণের তালিকার কথা বলে একটা বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা দেখা উচিত।
কাজ নেই ঘরে বন্দি অথচ লজ্জা-শরমের কারণে অনেকেই প্রকাশ্যে ত্রাণ নিতে পারছেন না। অথচ ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করলেই ত্রাণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার প্রচারণা চলছে। এতোগুলো মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারণার পরও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।
৩৩৩ এ ফোন করে অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন; মধ্যবিত্তদের উচিত ঘরে কষ্ট না করে ত্রাণ নেয়ার এই সুযোগ গ্রহণ করা।
এদিকে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে, করোনাভাইরাসের এই সঙ্কট মুহূর্তে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে ত্রাণ নিতে পারবেন দেশের সাধারণ মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এখন ৩৩৩ নম্বরে আমাদের সঙ্গে কানেক্টেড করে আমাদের জানালেই আমরা তার খাদ্যের ব্যবস্থা করছি। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে অস্বস্তিবোধ করেন তাদের উচিত এই নম্বরে ফোন করে সহায়তা গ্রহণ করা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দি মানুষের জন্য নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং সমন্বয়ের অভাবে ত্রাণ নিয়ে নয়-ছয় হচ্ছে। কেউ সপ্তাহে তিন থেকে চার দফায় ত্রাণ পাচ্ছেন। কেউ ১৫ দিনেও একবার ত্রাণ পাচ্ছেন না।
বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত যারা সামাজিক মর্যাদার কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারেন না, আবার ত্রাণ চাইতে পারেন না; তারা রয়েছেন দারুণ কষ্টে। শহরে কোথাও মধ্যবিত্তরা ত্রাণ পাচ্ছেন না।
অথচ নিম্নবিত্তদের অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করে এক দিনেই দুইবার ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। এমনকি ত্রাণ বিতরণ করতে গেলে দেখা যায় সবখানে একই মুখ।
শহরের আমলাপাড়া, কালীরবাজার, খানপুর, দ্বিগুবাবুর বাজার, টানবাজার, নয়ামাটি, চাষাড়া, নিতাইগঞ্জ ও পালপাড়া সহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে গৃহকর্মীদের (কাজের বুয়া) ছুটি দিয়েছেন। মহানগরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নানা পেশার মানুষ ঘরে বসে কষ্টে দিনাতিপাত করলেও ত্রাণের লাইনে এই গৃহকর্মীদের দেখা যায় বেশি।
মহানগরীতে জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ নিজেদের মতো করে ত্রাণ দিচ্ছেন। সব লাইনে দেখা যায় মহিলাদের সংখ্যা বেশি। আর এই মহিলাদের বেশিরভাগই গৃহকর্মী।
খানপুর ব্যাংককলোনীর সুমি নামের এক গৃহকর্মীর ভাষ্য, তিনি গত এক মাসে যে ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন, অনায়াসে তা তিন মাস খেতে পারবেন।
ইসদাইর গাবতলীর আবুলের মা নামে পরিচিত এক গৃহকর্মী জানান, বাসার কাজ বন্ধ হওয়ার পর তিনি যে ত্রাণ পেয়েছেন তার অর্ধেক বিক্রি করে ৩ হাজার টাকা পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিয়েছেন।