করোনা সংক্রমনের ভয়ে যখন স্বজনরাও মৃতের মরদেহ ধরতে নারাজ তখন তাদের সৎকারে এগিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। মহতি এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে করোনা দুর্যোগে আলাদা পরিচিতি পেয়েছেন এই কাউন্সিলর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন। কেবল মৃতদেহ সৎকারই নয় করোনাকালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে আছেন এই জনপ্রতিনিধি ও তার দল। গত ৮ মার্চ থেকে করোনা মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকায় কাজ করছেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার টিম। শুক্রবার টিম খোরশেদের দুই মাস পূর্ণ হল মহামারি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের।
সচেতনতামূলক প্রচার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি
নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে নানা কার্যক্রম শুরু করেন। ২০ হাজার লিফলেট ছাপিয়ে মহানগরীতে বিতরণ করেন তিনি। স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, জুমার খুতবায় সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রদান, লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করেন।
এদিকে গত ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানো শুরু করেন কাউন্সিলর খোরশেদ। ৫০ এমএলের ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল ২৫০ এলএলের লিকুইড হ্যান্ড তৈরি করে বিতরণ করেন তিনি।
মৃতদেহ দাফন বা সৎকার
করোনার এই দুর্যোগে হয়তো পরিস্থিতিই এমন হয়েছে যে স্বজনের মৃতদেহটাও অছ্যুৎ। ঘন্টার পর ঘন্টা মৃতদেহ পড়ে থাকলেও সৎকারের ব্যবস্থা করবেন এমন লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নাসিক মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করেন মাকছুদুল আলম খোরশেদ। খোরশেদ জানান, ৮ এপ্রিল প্রথম করোনা সন্দেহে আফতাবউদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু করে ৮ মে পর্যন্ত ৪১ জনকে দাফন ও সৎকার করেন। এর মধ্যে ১২ জন কোভিড-১৯ পজেটিভ, ২২ জনের উপসর্গ ছিল এবং ৭ জনের হয়েছিল স্বাভাবিক মৃত্যু। এদিকে নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষাগার স্থাপনের একমাত্র লিখিত দাবিও জানান তিনি।
টেলিমেডিসিন সেবা
রাজনৈতিক পরিচয় হিসেবে জাতীয়তবাদী দলের সমর্থক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি তিনি। খোরশেদ জানান, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই ১৩ এপ্রিল থেকে টেলি মেডিক্যাল সেবা দেয়া শুরু করেন। প্রথমে ৫ জন ও বর্তমানে ৮ জন চিকিৎসক হটলাইনের কল ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ২১৫ থেকে ২৫০ জন আমাদের সেবা গ্রহন করে থাকে।
এই কাউন্সিলর বলেন, ৬ মে পর্যন্ত ২৩ দিনে ৫২৮৩ জনকে আমরা সেবা দিয়েছি। নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলার বাইরে থেকেও আমরা অনেক ফোন পেয়েছি ও সেবা দান করেছি। আমরা জুন মাসের শেষ পর্যন্ত এই সেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজন হলে সময় সীমা বৃদ্ধি করা হবে।
টেলি মেডিক্যাল টিমের উদ্যোক্তা কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। হটলাইন ম্যানেজমেন্ট ও সমন্বয়ের দায়িত্বে আশরাফুজ্জামান হিরা, ডক্টরস টিম লিডার ডা. ফরহাদ জেনিথ। আইডিয়া পার্টনার টাইম টু গিভ
ত্রাণ বিতরণ
এছাড়াও সরকারি ত্রাণ ও বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠনের সহায়তায় ওয়ার্ডবাসীকে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য সহায়তা দেয়ার কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানালেন কাউন্সিলর খোরশেদ। তিনি বলেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও বাকি সকল প্রকল্পে আমার টিমকে সহায়তা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টাইম টু গিভ। টিম লিডার ও প্রধান সমন্বয়কারী ও টাইম টু গিভ এডমিন মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জনের একটি টিম গত দুই মাস যাবত করোনা মোকাবেলায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।