স্টাফ রিপোর্টার,গাইবান্ধা◊◊
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে ৫নং মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদে দফাদার পদে হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামিকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতা পরিমাপ,পরে সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ হল রুমে এমসিকিউ নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান অজ্ঞত কারনে সেই পরীক্ষার হলে সাংবাদিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে পরীক্ষা শেষ করেন।এরপর দুপুরে নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসানেরর কক্ষে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সকল প্রক্রিয়া শেষে বিকেল ৪ টার দিকে নোটিশ বোর্ডে ফলাফল প্রকাশের পর হত্যা মামলার চার্জসিট ভুক্ত আসামি নির্বাচিত,প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়াই নির্বাচিত,শারীরিক যোগ্যতা ছাড়াই নির্বাচিত এবং সুপারিশকৃত প্রার্থীকে নির্বাচিত করাসহ ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজন প্রীতির বিষয়গুলো সাংবাদিকদের নজরে আসে।
ওই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান,সদস্য থানা অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী ভুট্টো ও উপজেলা আনসার-ভিডিপি কমান্ডার আব্দুল আউয়াল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
হত্যা মামলার চার্জসিটভুক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত দফাদারের নাম মো. জহুরুল ইসলাম,তার পরীক্ষার রোল নম্বর-২০০৩। তিনি উপজেলার ৫নং মহদীপুর ইউনিয়নের বড় গোবিন্দপুর গ্রামের আজিম উদ্দীনের ছেলে। তার সিনিয়র প্রতিদ্বন্দ্বী বুজরুক বিষ্ণপুর গ্রামের সহাদেবের ছেলে শ্রী পরেশ,শ্রীলাল, শ্রী চিনিলাল ও ফরকান্দাপুর গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ভোলা মিয়া। তাদের অভিযোগ জহুরুল মোটা অংকের নগদ নারায়ণ দিয়ে ইউপি সচিবসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে আমাদের মোবাইলে হত্যার হুমকি দিয়ে নিয়োগ মাঠে উপস্থিত হতে দেয়নি। জহুরুল এই বলে তাদের হুমকি দেয় যে,একটা খুন করেছি,নিয়োগ মাঠে আসলে তোদেরকেও খুন করবো। ভয়ে আমরা কেউ নিয়োগ মাঠে উপস্থিত হইনি। আমরা মনে করেছিলাম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাঠে না থাকলে নিয়োগ মাঠ বিধি মোতাবেক স্থগিত হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়,জহুরুল ইসলাম ২০২১ সালে পলাশবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলা (মামলা নং-৫/৩০৮ তারিখঃ ০৪ডিসেম্বর-২০২১ধারা-৩০২/৩৪)’র চার্জশীটভূক্ত ৮ নম্বর আসামি।
উল্লেখ যে,২০২১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ভোরে উপজেলার ৫নং মহদীপুর ইউনিয়নের বড় গোবিন্দপুর গ্রামে মৃত আঃ মাজেদ প্রধানের স্ত্রী স্বপ্না বেগমের ধানের বীজতলা থেকে সাদা মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাদা মিয়া ওই গ্রামের আব্দুল হান্নান মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই শাহজাহান মিয়া বাদী হয়ে ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২১ ইং পলাশবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ক্লু লেস এ মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করেন তৎকালীন সময়ের তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা এস আই (নিঃ) মানিক রানা। পরে ব্যাপক তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করেন তিনি।
অপরদিকে,হত্যা মামলার চার্জসিটভুক্ত আসামীকে দফাদার নিয়োগের বিষয়ে ইউএনও কামরুল হাসান বলেন,মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত জহুরুল ইসলাম নামে এক মহল্লাদার (চৌকিদার) ২০২১ সালে একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হন। সে সময় তিনি বরখাস্তও হন। পরবর্তীতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে স্বপদে পুনঃ বহাল করেন। গত শুক্রবারের পদোন্নতি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র। তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তার পরেও মামলার কাগজপত্র পুনঃ যাচাই করে তার নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
নিয়োগ বোর্ডের অপর সদস্য পলাশবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন,জহুরুল ইসলাম হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামি। চার্জশীটে তার নাম রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচানাধীন বলেও জানান তিনি।
এদিকে,নিয়োগ বোর্ডর অপর সদস্য উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ডার আব্দুল আউয়াল হোসেন বলেন,ইউএনও মহোদয়ের নিকট থেকে শুনেছি মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত জহুরুল ইসলাম নামে এক মহল্লাদার ২০২১ সালে একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার হন। সে সময় তিনি বরখাস্তও হন। পরবর্তীতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে স্বপদে পুনঃ বহাল করেন। এর বেশী কিছু আমার জানা নেই। যেহেতু তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো না তাই তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।