মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মো.নজরুল ইসলাম:
বৈশি^ক মহামারী করোনায় আজ নাকানিচুবোনিতে আছে গোটা দুনিয়া। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো পূঁিজবাদী দেশের তুলনায় স্বাস্থ্যগত ও মানবিক দিকে অপেক্ষাকৃত ভালো থাকলেও সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা হারাবে। পূজিবাদী দেশগুলোতে সম্পদের অসমবন্টন ও মতাদর্শিক লড়াইকে জাহেরি করতে গিয়ে ধর্মান্ধতা ও ধর্মব্যাবসার প্রসার দিনদিন বৃদ্বি পাচ্ছে। যারফলে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি করোনাকালে সামাজিক দূরত্বের নামে সামাজিক অনাস্থা ও মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে তীব্রভাবে। তৃতীয় বিশে^র দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকিসহ বহু বিপদের সামনের সারিতে আছে। হঠাৎ মহামারি করোনায় সরকার জনগনকে আরো বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। জনগন ও সরকারের মধ্যে আস্থা-অনাস্থার দ্বৈরত্ব যত জটিল হবে ততই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে নতজানু হবে সার্বভৌমত্ব ও প্রতীবেশী ভারতীয় আধিপাত্যবাদী সাম্প্রদাঢিক আগ্রাসন আরো প্রবল হবে।
এত সংকটের মধ্যেও দেশের গ্রামীণ অর্থণীতির চাকাকে যারা সচল রাখছে তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে কৃষক-ক্ষেতমজুর তারপর দেশের শ্রমিক ও প্রবাসী দাস শ্রমিকরা এবং পিছিয়ে পরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অদৃশ্য পরিশ্রম। লকডাউনে সবকিছু ওলট-পালট হলেও কৃষক এখনো জমিতে, শ্রমিককার খানায়, গ্রামীণ নারীরা বাড়ীতে গরু-ছাগল-হাস-মুরগী পালন ও সবজী চাষ করে নিজেদের জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি আমাদেরকে বাঁিচয়ে রাখলেও আমরা তাদের খোজ রাখিনা।
মহামারি করোনাকালে মানিকগঞ্জ খালপাড়ে বাজার করতে গিয়ে কথা হয় সারা বছর একই স্থানে সবজি বিক্রি করেন মানিকগঞ্জ শহরের সকলের পরিচিত আছিয়া বেগম (৬৮) এর সাথে। আমাকে সাংবাদিক বলে জানে বলেই কাছে ডেকে করোনাকালে দু:খের দুটি কথানাশুনে আসতে পারলাম না। তিনি বলেন- আমরা হরিরামপুরা চরভাঙ্গা মানুষ, ভাওরডাঙ্গিতে আমাদের বাড়ী ছিল ৮ ভাই বোনের যৌথ সংসারে বড় হয়েছি। বিয়ের আগেই তিনবার নদী ভাঙ্গন দেখেছি। আমার স্বামী শেখ আকবর আলী ২য় বিয়ে করাতে আমি স্বামীর সংসার ত্যাগ করে আমার একটি ছেলেকে নিয়ে বাড়ী ছেড়েছি গন্ডগলের পর শেখ মুজিবকে যে বছর নির্মম ভাবে হত্যা করলো সেই বছর। আমার খালার বাড়ী মানিকগঞ্জ হিজুলীতে। হিজুলীতে এসে মানুষের বাড়ী কাজ করে নিজেই বাড়ী করেছি। ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। সে এখন সৌদি প্রবাসী। আমার খোজ খবর রাখেনা, আমি তার খোজ রাখি, নাতি পালতে হয়। বৌ বেশিরভাগ সময় বাপের বাড়ী থাকে। তারপরও বউ ও ছেলের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি বাড়ির পালানে জৈব সারের সবজি রোপন করি, একটি জমি বন্ধক নিয়ে কলা ক্ষেত করেছি। আমি সারা বছর এখানেই আনাজে কলা, দেশী মুরগীর ডিম, জৈব সারের সবজি ও কিছু লেবু নিয়ে দিনে একবেলা বসি। মাল বিক্রি না হলে বিকেলেও আসতে হয়। আমি এক দামে জিনিস বিক্রি করি, মিথ্যা কথা পছন্দ করি না। বেশ চলতে ছিলো। হঠাৎ শুনি করোনার অসুখ, আমি বলি কারেন্টের অসুখ, ধরলেই বিপদ, সবাইকে নিয়ে বিপদ। এহেন অবস্থায় দোকানপাট বন্ধ। বাজারে আসলে আগের চেয়ে কম বেচাকেনা হয়। আর জিনিস গুলো জোটাতে তো নরাচরা দিতে হয়। আমারও তো বয়স হয়েছে। আর বয়স্কদের বুঝি এই রোগে বেশি বিপদ। ঘরে বসে থেকেও রোগা হয়ে গেলাম নানা চিন্তা ভাবনায়, বাজারে হরেক রকমের মানুষ, আক্রান্তের ভয় বেশি। তারপরও মাস খানেক ঘরেই ছিলাম। এখন আর পারছিনা। শুরু করলাম নতুন করে। আমি দোকানে খরিদ দার আসলেই বলি হাতাহাতি করবেন না, কোনটি নিবেন বলেন আমি দেখাবো এক দামে জিনিস বিক্রি হবে, না হলে আবার আসবেন। এভাবে চলছে। মাুনষকে সোজা করা খুব কঠিন কাজ। শিক্ষিত মানুষগুলোও অসচেতন।
সরকারি দান অনুদানের কথা জিজ্ঞেস করলে- আছিয়া বেগম হেঁসে বলেন- আমি পৌরসভার নাগরিক একটি বয়স্ক ভাতাও কপালে জুটে নাই। যারা ত্রান দেয় ওদের আমাদের চেয়ে অভাব বেশি বলে তাদের পেট ভরবেওনা আমরা পাবওনা। আগে একটি ভোট দিতাম এখন সে ক্ষমতাও নাই। আমাদের কান্নাকাটি শুনবে কেন, আর আমরাই তো তাদের চুরি করার সুযোগ দিয়েছি, এখন দোষ দিব কার। আমার কর্ম আমি করব তবে সেই কাজে বাঁধা দিতে হলে বা বুঝিয়ে বিরত রাখতে হলে তার প্রস্তুতি আগেই নিতে হয়, রেশনপদ্ধতিতে সকলের ঘরে ঘরে খাবার দিতে হয়। কারো কাছে ভরসা পাইনা বলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি যে কখন একজন মহামানব এসে আমাদেরকে উদ্ধার করেবে এবং একটি সমতার সমাজ হবে। সেই অপেক্ষায় আমার মত অনেক আছিয়া বেগমরা সংগ্রাম করছে। গরিব মানুষের রুটি রুজির সংগ্রাম চলছে চলবে।