মোঃ মহসিন রেজা,শরীয়তপুর◊◊
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবু সাঈদ এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো.জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর জেলা আইনীজীবীগণের কল্যাণ তহবিলের এফডিআরের এক কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের দুই জনের আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।
গত (২৪ এপ্রিল) সোমবার জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দুই জনের আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এড. মোঃ আবু সাইদ ও এড মোঃ জহিরুল ইসলাম শরীয়তপুর জেলার কোনো আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।
সমিতির এফডিআরের টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে সিনিয়র এডভোকেট বজলুর রশিদ আকন্দ, এডভোকেট মৃধা নজরুল কবির , এডভো্েট মোঃ লুৎফর রহমান ঢালী, এডভোকেট মোঃ শহিদুল ইসলাম সজিব ও এডভোকেট মোঃ নজরুল ইসলামকে সদস্য করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানাযায়, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সমিতির যৌথ হিসাব নম্বরে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬৫ লক্ষ টাকা এফডিআর করা হয়, এর পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত আরও ৬৫ লক্ষ টাকা যৌথ হিসাব নম্বরে এফডিআর করা হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটির হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সাল হতে ২০২১ সালের মধ্যে এফডিআরের ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ও তার লভ্যাংশের ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলেন আইনজীবী নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ আইনজীবীরা।
এফডিআরের টাকা আত্মসাতকালীন সময়ে আবু সাঈদ দুইবার সভাপতি ও দুই বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন এবং জহিরুল ইসলাম এক বার সভাপতি ও দুইবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
এ বছর ২০২৩-২৪ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আবু সাঈদ পূনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন ও এডভোকেট তাজুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। যদিও আইনজীবী সমিতির বেশিরভাগ কার্যক্রম ও সুবিধাদী সাধারণ সম্পাদকের হাতেই ন্যাস্ত থাকে।
এঘটনায় শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে আইনজীবী সমিতির কল্যাণ তহবিলের এফডিআরের এক কোটি ৩০ লাখ ও এফডিআরের লভ্যাংশের ৫০ লাখসহ মোট এক কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার তথ্য মিলেছে।
এঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সভায় আলোচনা হবে। সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্তরা শরীয়তপুরের কোনো আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন না। এছাড়া আত্মসাৎ করা টাকার মধ্যে গত সপ্তাহে আবু সাঈদ ৪০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী নেতারা।
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিভিন্ন সময়ে এফডিআর ম্যাচুরিটি হওয়ার তথ্য আমাকে জানানো হয়েছে, বর্তমান সভাপতি আবু সাঈদ বিভিন্ন সময় এফডিআর করার কথা বলে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও চেকে সই নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি এফডিআরের কপিও আমাকে দেখিয়েছেন। এখন মনে হচ্ছে সেগুলো নকল ছিলো, ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবু সাঈদ টাকা আত্মসাতের ঘটনা স্বীকার করে, সাধারণ সম্পাদক বরাবর লেখা একটি দরখাস্ত তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, তা থেকে কিছু লেখা তুলে ধরা হলো, তিনি লিখেছেন আমি আমার পরিবারের বিশেষ প্রয়োজনে ১কোটি ৪২ লাখ টাকা খরচ করেছি, বিভিন্ন সময় সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে চেকে স্বাক্ষর নিয়েছি কিন্তু তা থেকে তিনি কোন টাকা গ্রহন করেননি। ইতিমধ্যে আমি চল্লিশ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছি বাকি টাকা খুব তাড়াতাড়ি ফেরত দেবো।
সমিতির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সিনিয়র, জুনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, আমাদের আইনজীবী সমিতির অর্থ থাকা স্বত্বেও আমাদের সমিতি ভবন সম্প্রসারিত না করার কারণে আমরা একটি ভালো চেম্বার নিয়ে বসতে পারিনা, সড়কের পাশে চায়ের দোকানের মত ঘরে আমরা চেম্বার করি এতে আমাদের লজ্জা লাগে। আমরা চাই আমাদের টাকা উদ্ধার করে আইনজীবী সমিতি ভবন সম্প্রসারিত করা হোক এবং দোষীদের আইন মোতাবেক বিচার করা হোক।