করোনা ঠেকাতে কার্যকর হিসেবে পরিচিত কেএন-৯৫ মাস্ক তৈরি করছে বাংলাদেশী মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপ। চীনা গাইডলাইন মেনে এ মাস্ক তৈরি করতে পারলে আমদানিমূল্যের অর্ধেক দামে বাজারজাত করা যাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। অপরদিকে স্বাস্থ অধিদফতর বলছে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই ছাড়পত্র পাবে দেশে তৈরি এই মাস্ক।
জানা যায়, মাস্কটিতে ‘এন’ অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে ‘নট রেজিস্ট্যান্ট টু ওয়েল’ বোঝাতে। কারণ এই মাস্ক শুধু বস্তুকণা ঠেকাবে, কোনো তরল নয়। সঙ্গে ‘নাইনটি ফাইভ’ জুড়ে দেয়ার কারণ হলো, এই মাস্ক বাতাসে ভাসমান ৯৫ শতাংশ কণাকেই ছাঁকতে সক্ষম।
এন-৯৫ মাস্কের সূচনা হয় থ্রি এম নামের একটি আমেরিকান কোম্পানির হাত ধরে। ১৯৬১ সালে তারা নতুন একটি সার্জিক্যাল মাস্কের উৎপাদন শুরু করে, কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের স্বীকৃতি অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ১৯৭২ সালে এসে ওই একই কোম্পানি তৈরি করে এন-৯৫ মাস্ক। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই বছরেরই ২৫ মে অনুমোদন পায় এই মাস্ক।
এদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দেশের বাজারে চীন থেকে পরীক্ষিত এই মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসাকর্মীদের। তবে আমদানিতে ব্যয়বহুল হওয়ায় এবার দেশেই তৈরি করা হচ্ছে কেএন-৯৫ মাস্ক। চীনের লিজ ফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জেএমআইর কারখানায় তৈরি হচ্ছে এই মাস্ক।
প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানায়, বিবি ২৬২৬-২০০৬ একটা গাইডলাইন রয়েছে। সেটাকে অনুসরণ করে আমরা মাস্ক উৎপাদন শুরু করেছি। এটার উৎপাদনের পরে আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগারে উত্তীর্ণ হলে এই মাস্ক বাজারে ছাড়া হবে।
চীনা প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশনের কর্মকর্তারা বলেন, মানের বিষয়ে আমরা কোন ছাড় দিচ্ছি না। ৫ স্তরের সুরক্ষাসম্পন্ন মাস্কে ৩ স্তরের সর্বাধুনিক বিশেষ ফিল্টার রয়েছে। এ কারখানায় দিনে অন্তত ৪০ হাজার মাস্ক তৈরি করা যাবে। তবে আমরা অপেক্ষা করছি টেস্ট রিপোর্টের জন্য।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক ও মুখপাত্র রুহুল আমিন বলেন, মাস্কগুলো ব্যবহার করতে যতগুলো টেস্ট প্রয়োজন তার সবগুলোই করা হবে। দেশীয় ল্যাব ও আন্তর্জাতিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে টেস্ট করিয়ে প্রমাণ করতে হবে এই মাস্ক ব্যবহার উপযোগী। এরপর সেসব ফলাফল যাচাই করে কারখানা পরিদর্শন করে সত্যতা পেলে বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া হবে।
জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে দেশেই কেএন-৯৫ মাস্ক বানানো হচ্ছে। মাস্কে ৫ স্তর সুরক্ষা প্রযুক্তি থাকবে। এরপর এই মাস্ক দেশ ও বিদেশে পরীক্ষা করার সংস্থা খেকে পরীক্ষা করিয়ে দেশের বাজারে সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, দেশে উৎপাদন করা মাস্ক বাজারে ছাড়া হলে এর দাম অর্ধেকে নেমে আসবে। আমদানিতে যে খরচ পড়তো সেটাও লাগবে না। এতে করে দেশ উপকৃত হবে।