কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৯তম প্রয়াণ দিবসে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টায় ২নং রেল গেটস্থ বাসদ কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক প্রদীপ সরকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন– বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক ও চারণের কেন্দ্রীয় ইনচার্জ নিখিল দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সুলতানা আক্তার, চারণের সংগঠক সংগঠক জামাল হোসেন, সেলিম আলাদীনসহ আরও অনেকে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, আজ ২২ শ্রাবণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। ইংরেজী ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট কবি লোকান্তরিত হন। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথম বাঙালি ও প্রথম এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পান এবং বিশ^দরবারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে মর্যাদায় নিয়ে আসেন। গান, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, পত্র সাহিত্য ও প্রবন্ধসহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবাধ বিচরণ ছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তার সক্রিয় অবস্থান আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে সহায়তা করে এবং বৃটিশ সরকার ১৯১১ সালে রদ করতে বাধ্য হয়। দেশপ্রেমের অসংখ্য গানসহ বিভিন্ন লেখা এ সময়কালে রচিত হয়। আমাদের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” এসময়ের লেখা। আজকে আমাদের শাসকগোষ্ঠী রবি ঠাকুরের জন্ম–মৃত্যু দিবস পালন করে কিন্তু তার দেশপ্রেমের মর্মার্থ ধারণ করে না। যদি ধারণ করত তাহলে তারা দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে পারতো না। সামাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রমারোঁলা আনাতোলি ফ্রাঁস, বার্ট্রান্ড রাসেল, আইনস্টাইনসহ বুদ্ধিজীবীরা মিলে লীগ এগেইনস্ট ফ্যাসিজম এন্ড ওয়ার গঠন করেন। এই কমিটির ভারতীয় শাখার তিনি প্রধান ছিলেন ।
কবিগুরু ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। বলেছেন ধর্ম হলো আগুন আর ধর্মতন্ত্র হলো ছাই। মুক্তির মন্ত্র পড়ে ধর্ম আর দাসত্বের মন্ত্র পড়ে ধর্মতন্ত্র। আজ ধর্মতন্ত্র ধর্মের উপর মোড়লী করে। ফলে মন্দির–মসজিদ অপবিত্র হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতিত হয়। রাষ্ট্র ও শাসকরা এই ধর্মতন্ত্রকে পৃষ্টপোষকতা করতে থাকে।
রবিঠাকুর মানুষে মানুষে বৈষম্য নিরসন চেয়েছেন। তিনি শোষণ যন্ত্রের বিরুদ্ধে রক্তকবরীতে নন্দিনীকে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি কৃষকদের– প্রজাদের দুর্দশায় ব্যথিত হতেন। তিনি মানুষের উপর মানুষের নিপীড়নে তীব্র ঘৃণাবোধ করতেন। অথচ এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমজীবী মানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মত শোষণ যন্ত্র চাপিয়ে রেখেছে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথের চিন্তা শাসক বুর্জোয়াগোষ্ঠী ধারণ করেন না। আজ শ্রমজীবী মানুষকেই রবিঠাকুরের শিক্ষা গ্রহণ করে শোষণমুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।