নিজস্ব প্রতিবেদক:
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের শেয়ারের দাম কারণ ছাড়াই বাড়ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে এমন তথ্য প্রকাশ করা হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। দফায় দফায় বেড়েই চলেছে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম।
গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিটি কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে চার কার্যদিবসেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং আইপিও খরচের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ার ছেড়ে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করা রবির শেয়ার গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়।
লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মহাদাপট দেখিয়ে চলেছে। কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলা হয়, রবির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ৪ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানিটি জানায়- সম্প্রতি শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পিছনে কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে গত ৫ জানুয়ারি ডিএসই থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে এরপরও ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হওয়া প্রতিটি কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এর মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোন কোম্পানি লেনদেন শুরুর প্রথম ১৩ কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
অবশ্য ১২ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন তদন্তের নির্দেশ দিলে রবির দাম বাড়ার প্রবণতায় কিছুটা ছেদ পড়ে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তের নির্দেশে ১৩ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হতেই রবির শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম আগের দিনের তুলনায় কমে যায়। তবে লেনদেনের শেষের দিকে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে তদন্তের নির্দেশ স্থগিত করা হচ্ছে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার আবার বাড়ে। ফলে পতন কাটিয়ে ৪০ পয়সা দাম বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ করে রবি।
বাজারে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন সন্ধ্যার আগেই সত্য হয়। ১৩ জানুয়ারি বিকেলেই বিএসইসি দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে তদন্ত স্থগিতের নির্দেশ দেয়। এতে ১৪ জানুয়ারি আবার হু হু করে বাড়তে থাকে রবির শেয়ারের দাম। দেখতে দেখতে কোম্পানিটির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
এতে গত এক সপ্তাহে রবি আজিয়াটার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২২ টাকা ৫০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকা ১০ পয়সা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা।
এদিকে দফায় দফায় শেয়ারের দাম বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দেন। ফলে গেল সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮০ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১১৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
রবির পরেই গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল বেক্সিমকো। সপ্তাহজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- লাফার্জহোলসিমের ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সামিট পাওয়ারের ২২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ২১ দশমিক শূন্য ৯ শতংশ, বিএসআরএম স্টিলের ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং অ্যাপোলো ইস্পাতের ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম বেড়েছে।
[জাগো নিউজ২৪.কম]