আজ পবিত্র হজ। আরাফাতের ময়দানে থাকার দিন। সেলাইবিহীন শুভ্র কাপড়ে আজ সূর্যদয়ের পর মিনা থেকে রওনা হয়ে সবাই পৌঁছবেন আরাফায়। জোহর নামাজ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে থাকবেন সবাই।
আকুল হৃদয়ে মহান রাব্বুল আলামিনকে বলবেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক।’ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই; সব প্রশংসা ও নিয়ামক শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার। এই ধ্বনিতে আজ মুখরিত হচ্ছে আরাফাতের ময়দান।
হজে অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক দূরত্ব মেনেই হজ কার্যক্রম শুরু করেছেন। মূলত মিনায় অবস্থান নেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু গত মঙ্গলবার রাত থেকে হয়েছে পবিত্র হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা। বুধবার সারা দিন ও রাত তারা মিনায় কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ ৯০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না কেউ।
গত বছর যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছিলেন, সেখানে এবার এ সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১০ হাজার জন। তাদের সবাই সৌদি আরবে অবস্থানরত। অর্থাৎ, এবার সৌদি আরবের বাইরে থেকে গিয়ে কাউকে হজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে যারা সুযোগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী।
এ বছর হজে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত রাখা হলেও এর অন্যতম মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরাফাত ময়দানে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে দেয়া খুতবা সম্প্রচারের সময় বাংলাসহ মোট ১০টি ভাষায় পাঠ করা হবে। করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় হজের এ সময়টিতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার। হাজিদের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। হজ শুরুর আগে দুই ধাপে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়।
আনুষঙ্গিক স্থাপনাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হজের সময় সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাজিদের প্রত্যেকের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। হাজিদের জন্য ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদ নামক কালো পাথরে চুমু দেয়া ও স্পর্শ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংক্রমণ যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য জমজমের পবিত্র পানি পানেও থাকছে বিধিনিষেধ।
এবার সবার জন্য জমজমের পবিত্র পানি সরবরাহ করা হবে প্লাস্টিকের প্যাকেটে। সেই পানিই পান করতে হবে সবাইকে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে শয়তানকে পাথর ছোড়ার আনুষ্ঠানিকতাতেও থাকছে নতুনত্ব। এবার সর্বোচ্চ ৫০ জন হাজি একসঙ্গে পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। তবে এটি সাধারণ কোনো পাথর নয়।
এবার জীবাণুমুক্ত পাথর সরবরাহ করা হবে হাজিদের। সৌদি আরবের সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (সিডিসি)- এর পক্ষ থেকে এ বছরের হজ পালনের একটি নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুরো হজের সময় মুসল্লিদের এক মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমনকি নামাজ ও কাবা শরিফ তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করার সময়ও তা মেনে চলতে হবে।
পবিত্র হজের খবর প্রচারেও পড়েছে করোনার প্রভাব। এবার কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে হজ কাভার করার অনুমতি দেয়নি সৌদি সরকার। অন্যদিকে ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্বের একটি হচ্ছে পবিত্র হজ। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ বা বাধ্যতামূলক।
প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনে অংশ নিতে সৌদি আরবে সমবেত হন প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরবে হজ আয়ের অন্যতম উৎসও। আর করোনার কারণে এবার এই খাত থেকে কোনো অর্থ পাচ্ছে না দেশটির সরকার। এর আগে চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে বেশকিছু নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ওই পদক্ষেপের আওতায় প্রত্যেক হজযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চিপলাগানো একটি স্মার্ট ব্রেসলেট, দুই সেট ইহরামের কাপড়, ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, জামারাতে নিক্ষেপের জন্য জীবাণুমুক্ত কঙ্কর, জুতা, ফোনের চার্জার, জায়নামাজ, জুতার ব্যাগ, হাতব্যাগ এবং হজের বিধি-বিধানসহ প্রাসঙ্গিক বইপত্র ও স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত হজ নির্দেশিকা।