বাঘারপাড়া প্রতিনিধিঃ
যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের অনেক এলাকায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অনুন্নত রয়ে গেছে ধলগ্রাম ইউনিয়ন ও এ এলাকার অবহেলিত রাস্তাঘাট।
এদিকে শুধু অনুন্নত রাস্তাঘাট নয়, অনেক বছর ধরে সংস্কার থেকে বঞ্চিত রয়েছে এ এলাকার মূল সড়কগুলো। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা তাছাড়া ব্যাপকভাবে কাদাযুক্ত রয়েছে এ গ্রামের বেশ কয়েকটি রাস্তা। এসব অবহেলিত রাস্তাঘাট জনপ্রিতিনিধিদের প্রতিশ্রুতিতে ছিলো কিন্তু তা কেউ বাস্তবায়ন করেননি। তাদের চোখের উপরে এসব জনদূর্ভোগের শিকার হয়ে আসছে এ এলাকার মানুষেরা। এসব দৃশ্য জনপ্রিতিনিধিদের চোখে পড়ে না এমন অভিযোগ করেছেন এই এলাকার বসবাসরত মানুষেরা।
বিশেষ করে ধলগ্রামের বিলে রাস্তায় বসবাসরত মানুষ রাস্তাঘাটে খুবই অমানবিক ভাবে চলাফেরা করেন। তাদের এই ভোগান্তির বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চোখে না পড়ার মতো ছিলো কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ রাস্তা সংস্কারের জন্য কোন প্রকার মাথা লাগান না।
রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় সড়ক থেকে কাঁদা মাটির আক্রমণের শিকার হন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষেরা। তারা নানান ভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে।
জানা যায়, বুধবার ও শনিবার এলাকার ইউনিয়নে বাজার বসে। সেই বাজারে যেতে গেলে অনেক মানুষ কাদা মাটিতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান এত করে বাজারে বিক্রি করতে নেওয়া ফসলটি ও নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে নানান ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
জানা যায়, এ গ্রামে অনেকের আত্মীয়-স্বজন আসতে নারাজ। তাদের দাবি ধলগ্রামের রাস্তাঘাট বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ এলাকায় গেলে মাটিকাদার শিকার হতে হয়। এজন্য এ গ্রামে অনেকে আত্মীয়তা করতেও ভয় পায়। বৃষ্টি কাল ছাড়াও এ রাস্তায় প্রায় ৫ থেকে ৭ মাস ধরে কাদা থাকে যা বসবাসরতদের ভোগান্তির শীর্ষে।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও ২০ বছরে তা কেউ পূরণ করেননি।
ঘটনার তথ্য মতে জানা যায়, আসলেই ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কাঁদাবন্দি এই গ্রামের মানুষেরা। তাদের দাবি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা।
এর আগে যশোর ৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্যরা ও এই এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কেউ রক্ষা করেন নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত থাকলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ গ্রামটিতে।
এ গ্রামে বসবাসরত মানুষের অভিযোগ প্রতিদিন সকাল বেলায় কাজকর্মে রাস্তায় বের হলে ঘুম থেকে উঠার পর কাঁদার সঙ্গে যুদ্ধ করে কাজ কর্ম করতে হয়।
ধলগ্রামে এমন অনুন্নত হাওয়ায় এ গ্রামের বসবাসরতরা ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশে জায়গা জমি নিয়ে নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। অনেকে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গিয়ে বসবাস করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে জানা যায়, ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার সিকদার চেয়ারম্যান অবস্থায় (প্রায় ১৫ বছরের আগে) আগড়া গ্রাম থেকে ধলগ্রামের মাঠের কাঁচা রাস্তাটি গ্রামের মূল সড়কের দিকে বেশ কয়েক কিলোমিটার পাকা রাস্তায় সংস্কার করেন। এরপর তিনি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কারণে এ রাস্তা সংস্কারের কাজ আর সম্ভব হয়নি।সেই থেকে কাজ বন্ধ আর কেউ এলাকার মানুষের এ জনদূর্ভোগের কথা মাথায় আনেন নি।
এরপর নতুন রুপে চেয়ারম্যান হওয়ার পর আবু তালেব মোল্লা রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও নানান কারণে তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি বিদায় কৃত চেয়ারম্যান হাফিজ মোল্লা ও এই এলাকার কিছু রাস্তাঘাট সংস্কার করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি ও তিনি রাখেন পারেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের নিজ বাড়ির কাঁচা রাস্তা গুলি পাকা রাস্তায় পরিণত করেছেন। যা জনসেবার মধ্যে বিড়াম্বনা ইতিহাস।
এদিকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত নির্বাচিত চেয়ারম্যান বাবু সুবাস দেবনাথ অবিরাম ও ধলগ্রামের মূর মাঠের এ বড় রাস্তাটি নির্বাচনের আগে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু তার মেয়াদ শেষের কাছাকাছি এলে ও সে প্রতিশ্রুতি তিনি এখনো রাখেননি।
ধলগ্রাম এলাকাবাসীর তথ্যমতে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই রাস্তাটির সংস্কারের কথা বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু কেউ সে প্রতিশ্রুতি পালন করেন না।
এই রাস্তাটি সংস্কার করার কথা বলে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হওয়ার পর অতীতের কথা ভুলে যান এমন অভিযোগ করেছেন এলাকায় বসবাসরত মানুষেরা। তাদের দাবি এই রাস্তাটি জনপ্রতিনিধিরা রেখে দিয়েছেন শুধু নিবাচর্নী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য।
ধলগ্রামে বসবাসরত মো: মিন্টু বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য বাবু রনজিত রায় এ রাস্তা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। সেই প্রতিশ্রুতিতে রনজিত রায় বলেছেন আমি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে ধলগ্রামের এই মাঠের মূল রাস্তাটি সংস্কার করে দিবো। কিন্তু আজ প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও তিনি এ দিকে খেয়াল রাখেন নি। বরং নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু তিনি তা ভূলে গিয়েছেন।
এলাকায় বসবাসরত সুমন হোসেন বলেন, প্রতিদিন কাদামাটির সঙ্গে যুদ্ধ করে কাজকর্মে যায়। কেন যে গ্রামের এই পাড়ায় ঘরবাড়ি করেছি তা জানি না। এভাবে প্রতি বছর এতো কষ্ট করে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় কাজ-কাম করা যায় না।
এলাকায় বসবাসরত আলীম মোল্লা বলেন, এ রাস্তা উন্নয়নের কথা বলে সবাই, কিন্তু কেউ কথা দিয়ে কথা রাখে না।
মো: সা. ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, শহর থেকে গ্রামে এনে কান্না আসে রাস্তায় যে কাদামাটি থাকে তার সাথে যুদ্ধ করে বাড়িতে যেতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোন পরিবেশ নাই।
ধলগ্রামের বসবাসরত সুইচ সরদার অভিযোগ করে বলেন, আজ থেকে অনেক বছর ধরে শুনছি যে ধলগ্রামের কাঁচা রাস্তা পাকা হবে। জন্মের পর থেকেই শুনি। এ রাস্তা পাকা হবে কিন্তু কৈই সরকার অনেক জায়গায় উন্নত করেছে অনুন্নত রয়েছে আমাদের এখানে। কাদাঁর জন্য বাজারের কাছে এস বাড়ি করেছি।
তিনি আরো বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে আমরা অনেক মানুষ কাদাঁমাটিতে বন্দি হয়ে যায়। সড়কে অবনতি থাকায় বিভন্ন ভাবে ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়।
সরদার বলেন, আপনারা দেখেন কি কষ্ট করে মানুষ চলাফেরা করে! এভাবে মানুষ চলাফেরা করতে পারে না! তাছাড়া আমাদের মূল সড়কগুলোর ও বেহাল অবস্থা। মূল সড়কের তুলনায় এই রাস্তাটা হওয়া খুব জরুরি বলে মনে করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘারপাড়া উপজেলার এলজিডি অফিসার আবু সুফিয়ান বলেন, এই এলাকার মূল সড়কের কাজ সম্প্রতি ধরা হবে। তবে মাঠের রাস্তার কাজ ও হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলাকার সংসদ সদস্য বাবু রনজিত রায়ের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেন নি। তবে এর আগে ধলগ্রামের এই কাদাঁযুক্ত রাস্তাটি পাকা রাস্তায় সংস্কার করে দেওয়ার জন্য এমপি বাবু রনজিত রায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।