রাজু আহমেদ
পুরো দেশেই এখন ভীতিকর পরিস্থিতি, ভয়ের দমকা হাওয়া বইছে। এমন কথা বলতে বা লিখতে মোটেও ইচ্ছে করছে না, কারণ সাধারন মানুষের কান্ডজ্ঞানহীনতা দেখে তেমনটি মনে হয় না। আজকেই এক স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবি (ঐতিহাসিক বোস কেবিনের নিয়মিত সদস্য) বলছিলেন, মহামারী হয়েছে, এটা ছড়াবে এসব তো জানা কথাই। বরং হবে না, ছড়াবে না এটা অস্বাভাবিক।
৬৪ জেলায় ২জন করে মারা গেলেও ১২৮জন, আক্রান্ত ৫জন করে হলেও ৩২০জন। এটা নিয়ে ভয়ের কি আছে? ছোট্ট করে একজন বললেন, ঐ সংখ্যায় আপনার মত জ্ঞানপাপী থাকলেই ভালো। আসলেই তো তাই। এমন জ্ঞানপাপী আর অজ্ঞানী পাপীতে ভরা এই এদেশ। ১জন করোনা আক্রান্ত মানে যে ব্যাংকের চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের মত, সটা তারা বুঝে না। তাই চা পাগল সবাইকে বাইরে যেতে হবে, মসজিদমুখি না হয়েও অনেকেই এখন নামাজী। নিজ চোখে দেখেছি, নিজ জ্ঞানে বুঝেছি, এদের ৬০ভাগই মসজিদমুখি হয়েছেন শুধু বাইরে যাওয়ার জন্য। যেহেতু পিটিয়ে ঘরে নিতে হচ্ছে, কারফিউ চাইতে হচ্ছে, সেহেতু এই গুনধর বাঙালীকে হিসাবের বাইরে রেখেই আমাদের ও সরকারকে কাজ করতে হবে। কারণ, এরা গুলির অর্ডার হয়েছে এমনও যদি শুনেন, তাহলেও বের হবেন গুলি করে কিনা দেখতে।
এবার আসি কিছু মূল কথায়। এই মাসটি আমাদের দেশের জন্য বর্ডার লাইন বা ক্রস লাইন। যে খামখেয়ালীপনা আমরা করছি, ঠিক সেই কাজটিই করেছিল ইতালি,আমেরিকা,স্পেনের মত দেশ। অনেকেই বলছেন সরকার এর দোষ। সরকার ২মাস সময় পেয়েছে। কিন্তু সত্যিটা কি জানি আমরা। জানুয়ারীর ২৮ তারিখ চীন অর্ধাঅর্ধিভাবে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই ভাইরাস সম্পর্কে জানিয়েছিল। সর্বপ্রথম ১মার্চ আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ায় করোনায় প্রথম মৃত্যূর খবর আসে। আর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনার খবর মিলে ৮মার্চ। চায়না থেকে যে এই মৃত্যুর সুনামী এতদূর এসে পরবে এটা আগে থেকেই কেউ জানতেন, এমন কথা বললে সে হবে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। তাহলে আমাদের সরকার বুঝে উঠতে আর সময় পেয়েছে কত দিন ??
আমাদের উচিত ছিল অনেক কিছুই। সমন্বিত পরিকল্পনার। কিন্তু একথাও সত্য সরকারের মন্ত্রীদের অতিকথনে ক্ষতি হয়েছে। তারপরেও ভেবে দেখা উচিত, প্লেন, গণপরিবহন বন্ধ করে না ক্যান? করা হোল। হাজী ক্যাম্প ক্লিন না ক্যান? করা হলো। সেনাবাহিনী নামায় না ক্যান?- নামালো। লক ডাউনলোড দেয় না ক্যান? দিলো। পিপিই নাই, মোটামুটি সমস্যার সমাধান হলো। টেস্ট কিট নিয়ে দাবী উঠলো, এলো টেস্ট কীট। কিন্তু আমরা কি করলাম!!! ছুটি শব্দ শুনে উৎসব পাগল বাঙালী আমরা চলে গেলাম ছুটি কাটাতে। সেখানেই শেষ নয়, চায়ের কাপে আড্ডায় ঝড় তুলে ফেললাম। থানকুনি পাতা থেকে সকল আবিস্কার এখন ইতিহাস। সরকার শুধু একটাই অনুরোধ করেছিল ঘরে থাকুন,,মেনেছি????
আমি বিশ^াস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ^ শাসন করার মত জ্ঞান ও বিচক্ষনতা রাখেন। তিনি ইতিমধ্যেই কুর্মিটোলা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, গ্যাস্ট্রো লিভার হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, মিরপুর ফ্যামিলি প্ল্যাণিং হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ ফিভার হাসপাতালে রুপ দিয়েছেন।
কারণ সাধারন সর্দি কাশিসহ বুক ব্যথার রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। করোনা পরীক্ষা করতে ১থেকে ১৬, ১৬ থেকে এখন ২৮টি পয়েন্ট করা হয়েছে। আমার ছোট্ট জ্ঞানে মনে হয়েছে, এখনও সময় আছে। পুরো দেশে আরো কমপক্ষে ১০০ করোনা হসপিটাল করা হোক। সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে, যাতে কমপক্ষে ৫০ হাজার বেড রেডি থাকবে। যেখান শুধুমাত্র করোনা উপসর্গ বা হাচি কাশি জ¦র নিয়ে আসা রোগীরাই যাবেন। যেভাবে চীনের উহানে করা হয়েছিল।
দেশে কয়েকটি জোন করা হোক কভিড-১৯ ফিভার হসপিটাল ও টেস্ট এর জন্য। প্রাইভেট হসপিটালগুলোকে, যাদের পিসিআর ল্যাব আছে তাদের টেস্ট কীট নিয়ে আসার সুযোগ দেয়া হোক বিদেশ থেকে। দুনিয়ার কোথাও এখন ভেন্টিলেটার নেই, চীনে অনেক ব্যবহৃত ভেন্টিলেটার আছে ,সেগুলোকে আমরা নিয়ে আসতে পারি কথা বলে। ঘোষনা আসা উচিত, যেসব সরকারীও বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে না, ডাক্তার অনুপস্থিত থাকবে, সাথে সাথেই একশনে যাওয়া হবে।
কারণ, মনে রাখা প্রয়োজন, যারা সংক্রমিত হবে তাদের অন্তত পক্ষে ২% থেকে ৪%-কে আমরা হারাবো। এই রোগে মৃত্যুর হার যে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ঠিক মত হলে এই মৃত্যুর হার ১%-এর নীচে নামিয়ে আনতে স্বক্ষম হবো আমরা। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের দেশ দুনিয়ার বুকে সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। মনে রাখতে হবে ইউরোপীয় দেশগুলো ধারণা করছে এই ভাইরাস তাদের মোট জনসংখ্যার ন্যূনতম ৬০-৭০% মানুষকে আক্রান্ত করবে। তাই আমাদের দেশে এই সংক্রমন ঠেকাতে না পারলে ১০ কেন, ২০ কিংবা ৩০ লক্ষ মানুষের মাঝে এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়াটা খুব বিচিত্র কিছু হবে না। ভাবা যায়! দুই থেকে আড়াই লক্ষ মানুষ শেষ হয়ে যাবে এই সংক্রমণ না ঠেকাতে পারার কারণে! যা কারোরই কাম্য নয়। সবশেষে কিন্তু সাহায্য ঐ একটা স্থানেই শেষ হবে। সেটি হলো আকাশের কাছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা। অলি-আউলিয়ার দেশ, তিনি নিশ্চয়ই রহম করবেন। কারণ, তিনি তার বান্দাকে অত্যাধিক ভালোবাসেন।