আরিফুল ইসলাম জিমন,দিনাজপুর◊◊
বনবিভাগের নজরদারির অভাবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাজারের সাপ্তাহিক হাটে নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস চারা বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ক্রেতারাও না বুঝে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিষিদ্ধ এ গাছ। অপরদিকে নার্সারিগুলোতেও এ গাছের চারা উৎপাদনের প্রতিযোগিতা চলছে, যেন দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা বন কর্মকর্তা ফসিউল ইসলাম বলছেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, তবে ডিসি অফিসের মিটিং এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একবার শুনেছিলাম। এবার উপজেলা মাসিক মিটিং এ বিষয়টি তুলে ধরবো।
গত একমাস সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে, বাড়ির আশপাশে, খালের ধারে, পতিত জমিতে বাগান আকারে ব্যাপক হারে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়েছে। উপজেলার সদর ওসমানপুর বাজার, ডুগডুগী হাট, রানীগঞ্জ বন্দর সহ ঘোড়াঘাট পৌরসভার সাপ্তাহিক হাটের দিন এই গাছ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস গাছ এভাবে বিক্রি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের নজরদারি নেই। এর ফলে না বুঝেই পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই গাছ কিনছেন ক্রেতারা।
জানা যায়, ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ২০০৮ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এ গাছের চারা উৎপাদন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু দ্রæত বর্ধনশীল ও দাম বেশি পাওয়ার লোভে মানুষজন এ গাছ রোপণ করছেন। ঘোড়াঘাট পৌরসভা সহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এই গাছ সরবরাহ করে থাকেন পৌরসভা এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের মেহেদী নার্সারি, ৭নং ওয়ার্ডের আয়শা সিদ্দিকা নার্সারি, অন্যান্য নার্সারির মালিক রবিউল, সাহেব উদ্দিন সহ না না জানা উপজেলার অনেক নার্সারির মালিকেরা।
পার্শবর্তী গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে ইউক্যালিপটাসের চারা বিক্রি করতে আসা ইব্রাহিম বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হামরা কিছু জানিনা বাহে। হামাহরক আজকাই মানা কললে কাল থেকে আর বেচমনা।
আয়শা সিদ্দিকা নার্সারি মালিক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে বোন কর্মকর্তা আমাদের কখনও নিষেধ করেনি। আমরা অল্পকরে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করি।
বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, ‘নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস গাছের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের উদ্যোগে লোকজনকে সচেতন করতে হবে। পরিবেশের স্বার্থে আমাদের সবার এই গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলবে এই গাছ।’
ঘোড়াঘাট সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের লেকচারার জয়া রানী বলেন, অতিরিক্ত পানি শোষণের কারণে ইউক্যালিপটাসকে পরিবেশের বিরূপ গাছ বলা হয়। এটি পরিবেশের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। এ গাছের বিষয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে বার্তা না পৌছাতে পারলে লাভ হবে। মানুষের মধ্যে বেশি বেশি করে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এটি বন ও পরিবেশ দপ্তরের বিষয়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে বন বিভাগ যেকোন সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কোন সাহায্য করার থাকলে আমরা তা অবশ্যই করবো।