“আমি সমলিঙ্গের প্রতীক,নারীর সমস্ত অধিকার নিয়ে জন্মেছি।” এতে বোঝানো হয়েছে, সব নারীর উচিত তাদের অধিকার রক্ষা করা। নিজের অধিকারের জন্য সোচ্চার হওয়া, অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে লিঙ্গ সাম্যতা অরক্ষিত সেখানে আওয়াজ তোলা।
নারী জাগরনে নারীদের চিন্তাভাবনা নিয়ে নারীদের চিন্তাধারা তুলে ধরা হলোঃ
প্রতি বছর ৮ই মার্চ নারী দিবস এলেই যেন আমরা একটু নারী অধিকার নিয়ে নড়েচড়ে উঠি। সবার টাইমলাইনে “হ্যাপি ওমেনস ডে” নিয়ে লেখার হিড়িক পড়ে যায়। একটা দিনে উইশ করে পৃথিবীকে জানানোর চেয়ে, রাস্তাঘাটে হেনস্ত হওয়ার সময় নারীদের দোষারোপ করার আগে একটা বার নারীর কথা শুনার চেষ্টা করাটাই একজন নারী হিসেবে আমার কাম্য। একজন নারী হিসেবে আমাকে যদি সমানাধিকার নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার মতে সমানাধিকার হলো ” নারীদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া, তাদেরকেও একজন নারী হিসেবে মূল্যায়ন না করে একজন মানুষ হিসেবে গণ্য করা, এবং তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া।”একজন নারী একই সাথে যখন ঘর সামলানোর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে যখন সমানতালে নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে যান, আমাদের সমাজের কিছু মানুষ তখন পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করেন। দিন শেষে একজন নারী কারো মা, কারো বোন, কারো সহধর্মিণী।সর্বোপরি, নারীকে সম্মান করুন, পাশে থাকুন, ভরসার হাত বাড়িয়ে দিন। সকলের সমান সহযোগিতায় পৃথিবী হোক সুন্দর।
একজন নারী হিসেবে আমি নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।কারন,বর্তমান সমাজের অবকাঠামোতে পুরুষ নারীর কোনো ভেদাভেদ নেই।প্রথমে পরিবার থেকে বলতে গেলে,আমাদের ভাই বোনের মধ্যে আমার ভাই ছেলে হিসেবে যতটুকু শিক্ষা ও সুযোগ সুবিধা পেয়েছে,মেয়ে হিসেবে আমিও ঠিক ততটুকুই পেয়েছি।শুধু পরিবার নয়,সমাজ থেকেও নারীদের পিছিয়ে থাকার গল্প আজ বিরল।একটা কথা না বললেই নয়,আমি ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের একহন ছাত্রী। আর আমাদের ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৫০জন।তন্মধ্য মেয়ে ৩৫জন আর ছেলে ১৫জন। প্রথম ১০ জনের মেধা তালিকায় ছেলে মাত্র ১জন।এটাই আমার কাছে প্রমান করে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেও মেয়েরা পড়াশোনায় কতটা এগিয়ে।চাকুরী ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নারীরা কোনোদিক থেকে পিছিয়ে নেই।এখন মেয়েরা অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যবস্যা বানিজ্যিেও নিজের ভূমিকা রাখছে।একদিকে শক্ত হাতে সংসার সামলাচ্ছে। অন্যদিকে আর্থিক সহায়তার জন্য সংসারের বাহিরেও তার সমান ভূমিকা।বলতে গেলে “যে নারী রাধেঁ, সে চুলও বাধেঁ।” দিনদিন নারী জাগরণ বেড়েই চলেছে আর বাড়তেই থাকবে।পৃথিবীতে নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক সত্ত্বা। তাই কবি নজরুল ইসলাম অনেক আগেই বলে গিয়েছেন,”বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপাত্ত ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬কোটি ৫৭ লক্ষ।এখানে নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০২ঃ১০০।যেখানে নারীর অনুপাত বেশী সেখানে নারীকে বাদ দিয়ে কখনোই উন্নতি সম্ভব নয়।বাংলাদেশের ভাষা অান্দোলন,মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীর অবদান এক কথায় অনস্বীকার্য। বাংআলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও গার্মেন্টস শিল্প থেকে প্রচুর পরিমানে অর্থ অায় করছে।সমাজে একজন শিক্ষিত নারী যেভাবে অবদান রাখছে সেভাবে অশিক্ষিত নারীর অবদানও কোনো অংশে কম নয় কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, পশুপালন ইত্যাদি নানান মাধ্যমে।বাংলাদেশে নারীদের অবস্হান টুকু নারী বহুবছর বহু সংগ্রাম করে পেয়েছে।স্বাধীনতার পর থেকে নারীদের এত সফলতা সত্ত্বেও সমাজ এখনো পুরুষতান্ত্রিকই রয়ে গেছে,রয়ে গেছে লিঙ্গ বৈষম্য, নারীরা হচ্ছে বঞ্চিত।এখনো সমাজে অনেক মেয়ে শিশু স্কুলে যেতে পারেনা।তারা স্কুলের গন্ডি পেরোলেও বাল্যবিবাহের কঠোর অাইন থাকা সত্ত্বেও তাদের ১৮হবার পূর্বেই সংসারে জড়িয়ে দেয়া হয় পড়িয়ে দেয়া হয় বাল্যবিবাহের শিকল।এক্ষেত্রে, সরকারকে অারো কঠোর উদ্যোগ গ্রহন করা উচিত।উচ্চশিক্ষা,দক্ষতা,জীবিকা, সম্পদ,রাজনীতি,পরিবার ও সমাজ এসকল ক্ষেত্রে নারীরা এখনও পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে। নারীদের প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের পাশাপাশি সমাজের মানুষকেও সোচ্চার হতে হবে।যাতে নারীরা সমাজের সকলক্ষেত্রে নারীরা অংশগ্রহন করতে পারে।অন্যথায়, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশকে বাদ দিয়ে একটি দেশ ও একটি সুস্থ সমাজ গঠন কখনোই সম্ভব নয়।