নিজস্ব প্রতিবেদক◊◊
সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান ইসলাম। এটি নাজিল করা হয়েছে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে। এটি সর্বযুগের সর্বস্তরের মানুষের জন্য চিরকল্যাণকর জীবন বিধান। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী আসবেন না। আমাদের অঞ্চলে ইসলাম পরচারে আওলিয়া কেরামের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) নীলফামারীর ডিমলায় চাপানিহাট কাদেরিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া মডেল মাদ্রাসা আয়োজিত তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মানবসমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আউলিয়ায়ে কিরাম। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনবিদিত। মানবতার কল্যাণে তারা নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। তাদের সংস্পর্শে মানুষ ধন্য হয়, কল্যাণ লাভ করে। অভিশপ্ত ও বঞ্চিত যারা তারা কোনো ওলি-আউলিয়ার সংস্পর্শ পায় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে তাদের কোনো অভিভাবক নেই এবং কোনো সাহায্যকারীও নেই।’ (সূরা তাওবা-৭৪)।
তিনি বলেন, ইসলাম প্রচারে মহান আল্লাহর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আত্মনিবেদিত আউলিয়ায়ে কিরাম ইসলাম প্রচারকে তাদের মূল লক্ষ্যরূপে নির্ধারণ করেন। তারা ওয়াজ-নসিহত, তালিম-তালকিন, ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ এবং জাহেরি-বাতেনি পন্থায় ইসলাম প্রচার করেন। তারা উপযুক্ত খলিফা ও প্রতিনিধি তৈরি করে তাদের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেন।
ন্যাপ মহাসচিব আরো বলেন৷ আউলিয়ায়ে কিরাম প্রিয় নবী (সা.)-এর যোগ্য ওয়ারিশ ও উত্তরাধিকার। প্রিয় নবী (সা.)-এর ইলম ও জ্ঞানের তারা ধারক-বাহক। ফলে তাঁর আনীত ইসলামের প্রচারে তাদের নিরলস চেষ্টা ও সাধনা সর্বজনস্বীকৃত।
তিনি বলেন, আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর জীবনেতিহাস পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয় যে, ইসলাম প্রচারে তার সাধনা কত বেশি বিস্তৃত ছিল। তিনি নিজে জাহেরি ও বাতেনি ইলমের সমুদ্র ছিলেন।আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) ইসলামের সৌন্দর্য, বৈশিষ্ট্য ও তত্ত্ব প্রচারে বহু বই-পুস্তক রচনা করেছেন। হজরত খাজা মুঈনদ্দীন চিশতি (রহ.) শুধু ইমান-ইসলামের প্রচারের স্বার্থেই তার জন্মস্থান ত্যাগ করে আজমিরে এসে বসবাস করেছেন। রাজা পৃথ্বীরাজের প্রবল প্রতাপকে ধূলিসাৎ করে তিনি লাখ লাখ অমুসলিমকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসেন। তার দরবার ও খানকাকে কেন্দ্র করে তার তালিম ও তালকিনকে অনুসরণ করে এখনো ইসলামের প্রচার ঘটছে।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ইসলামের প্রচারে ওলি-আউলিয়ার নিরলস সাধনা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। হজরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশাবন্দি, মোজাদ্দেদ আলফে সানি, খাজা নিজামুদ্দীন বখতিয়ার কাকি প্রমুখ এবং বাংলাদেশের সিলেট হজরত শাহজালাল ইয়েমেনি, চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামি, রাজশাহীতে শাহ মখদুম, সোনারগাঁয়ে শায়খ শরফুদ্দীন আব তাওয়ামা, নোয়াখালীতে সৈয়দ ইমামুদ্দীন, ঢাকায় শাহ আলী বাগদাদি, শায়খ শরফুদ্দীন চিশতী শাহ আহসানুজ্জামান (রহ.) এবং অন্যান্য অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে সংশ্লিষ্ট আউলিয়ায়ে কিরামের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান সময়ে যখন নানারকম বাড়াবাড়ি, সীমালঙ্ঘন ও উগ্রপন্থা ইসলাম ও মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে কালিমা লেপন করছে তখন পীর, মুরশিদ ও ওলি-আউলিয়া ইসলামের শান্তির বাণী, মানবতার বাণী, অহিংস-অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা প্রচার করে যাচ্ছেন অবিরাম অবিরত। তাদের এ আহ্বান, প্রচার-সাধনা চলমান থাকুক অনন্তকাল।
৮নং ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতী আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, ওয়াজ করেন মাওলানা মুরশেদুল ইসলাম নুরী, মাওলানা মো. ইসলাম হোসাইন, মাওলানা শেখ খোরশেদ আলম মানিক নুরী, মাওলানা ক্বারি মোহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ আত্তারি মাদানি প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ন্যাপ ডিমলা উপজেলা আহবায়ক জাকারিয়া হোসেন রাজু, উপেদেষ্টা আবদুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক আবদুল মতিন, দুলাল ইসলাম, আব্দুস শুক্কুর প্রমুখ।