নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকতে কোনো যুদ্ধাপরাধীর ঠাঁই এ দেশে হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, শেষ হাসিনা একটি নাম। শুধু এই বাংলাদেশে নয়, এই উপমহাদেশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ হাসিনা। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের গরিব-দুঃখী মানুষের আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ দেশের অর্থনীতির মুক্তি ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পুরণের একটি নাম শেখ হাসিনা।
গৌরব’৭১ আয়োজিত ‘প্রজন্মের প্রার্থনা, শতায়ু হোক শেখ হাসিনা’ স্লোগানে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল কুদ্দুস এমপি, সাবেক এমপি এডভোকেট সানজিদা খানম, সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা অঞ্চলের কর কমিশনার আসাদুজ্জামান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল মাহমুদ বাবলু, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। এসময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হানিফ বলেন, শেখ হাসিনা এক সাথে ১৬ জন স্বজনকে হারিয়েছিলেন। তিনি বিদেশে থেকে বাবা, মা, ভাই-বোন হারানোর খবর পেয়েছিলেন। আজকে যারা গণতন্ত্রের সবক দেন, সেইদিন গণতন্ত্র কোথায় ছিল ? আইন করে একটি পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করার পরও বিচার করার পথ বন্ধ করে দিয়েছেলো। অনেক সময় দেখা যায় ক্ষমতা পালাবদনের সময় দুই একটা নিহতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যার নজির পৃথীবির কোথাও নেই। এটা ছিলো ৭১ সালের প্রতিশোধ। তার প্রমাণ পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে খুনি জিয়াউর রহমান রেখেছিলেন।
আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরো বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। কিন্তু ১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আসতে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এক পর্যায়ে স্বজন হারানো ব্যথা নিয়ে বাংলাদেশে আসলেন শেখ হাসিনা। সেই দিন তিনি বলেছিলেন, আমি এসেছি এদেশে আমার বাবা হত্যার বিচার চাইতে।
তিনি বলেন, কোনো বাঁধাই শেখ হাসিনাকে থামাতে পারেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করেছেন। বাকিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। একইভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোনো বাঁধাই ঠেকাতে পারে নি। বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেরই ফাঁসি হয়েছে। এখনো বিচার কার্যক্রম চলছে। বাকিদেরও বিচার হচ্ছে। শেখ হাসিনা যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এ দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশটাকে ধ্বংসের দিকে দিয়ে গিয়েছিল। ওই রাষ্ট্রকে শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। করোনার মধ্যে শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুযোর্গ মোকাবেলা করেছেন। আজকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল আধুনিক দেশ গড়ে তুলেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক মূহুর্তে আমরা সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছি। আজ এক অপরাজেয় নেত্রীর শুভ জন্মদিন। তিনি ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বাংলার বীর কন্যা। আজকে এই দিনে প্রধানমন্ত্রীর যে ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ; সেগুলোতে জননেত্রী শেখ হাসিনার শিশুকাল থেকে এ পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ধাপের চিত্র ফুটে উঠেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম বলেন, একজন সৎ ও দক্ষ মানুষের আজকের এই দিনে জন্ম হয়েছিল। সেই মানুষটি হলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে যেমন আমাদের দেশ স্বাধীন হতো না, তেমনি শেখ হাসিনার জন্ম না হলে আজকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশ আমরা পেতাম না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমি অনেক গর্বিত। কারণ প্রধানমন্ত্রী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। দেশে ফিরে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে যা যা করতে হয় তিনি তা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, বহু গুনের অধিকারী বঙ্গবন্ধুর কন্যা। উনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধুর অনেক গুন উনার মধ্যে রয়েছে এবং সেইভাবেই তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থাকার কারণে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে গেছে।
গৌরব ৭১কে ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, গৌরব’৭১ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, সেটা শুধু একটি প্রদর্শনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই ছবিগুলো আরো শত বছর পরেও আর্কাইভ হিসেবে থাকবে। শুধু তাই নয়, সেই সময় ছবিগুলো বর্তমানকে তুল ধরবে ।
ঢাকা অঞ্চলের কর কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, শেখ হাসিনা সম্পর্কে বেশি কিছু না বলে শুধু এটুকু বললেই হবে যে, উনার সুখ্যাতি আজকে দেশ ছেড়ে দেশের বাইরেও পৌছে গেছে। পৃথিবীর সকল রাস্ট্রনায়করা উনার দেশ পরিচালনার দক্ষতায় অভিভূত।
এছাড়াও রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আজ রাত সাড়ে এগারটায় বাংলাদেশ সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং গৌরব’৭১ এর যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে যাত্রা শুরু করবে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি।