মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির সভাপতিত্বে বলেন, রেলওয়ে ক্যাডার বহিভুর্ত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা—২০২০ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
ফলশ্রুতিতে ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ রেলওয়ে মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ হালনাগাদ/ সংশোধন কমিটি গঠিত হওয়ায় রেলওয়ের কর্মচারী ও পোষ্যরা আশার আলো দেখতে পায়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ মাসেও নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটি কতৃর্ক বিধিমালা হালনাগাদ/সংশোধন না করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া দুঃখজনক।
তিনি বলেন, পদোন্নতি যোগ্য পদে পদোন্নতি বন্ধ, অনুমোদিত জনবলের বিভিন্ন পদে আউটসোর্সিং এর নামে পকেট সোর্সিং চালুর ষড়যন্ত্র, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীর পোষ্যদের সরাসরি নিয়োগে জটিলতা সৃষ্টি, সরাসরি ও পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগে মহাপরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকের ক্ষমতা খর্ব করা এবং নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধনের নামে রেলওয়ে কর্মচারী ও পোষ্যদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ হালনাগাদ/সংশোধনে গঠিত কমিটি কতৃর্ক সংশোধন না করে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার কারণে রেলওয়ে কর্মচারী ও পোষ্যদের মাঝে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
নিয়োগ বিধিমালা—২০২০ রেলওয়ের প্রচলিত বিধি—বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। পূর্বেও নিয়োগ দুর্নীতি ছিল তবে তা পুকুর চুরির দুর্নীতি। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল জেনারেল ম্যানেজারের কাছ থেকে জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্ম কমিশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে রেলভবন এর প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির চলমান নিয়োগ কার্যক্রম এমন অবস্থায় গিয়েছে যে, পুকুর চোরের হাত থেকে নিয়োগ দুর্নীতি মুক্ত করতে গিয়ে সাগর চোরদের হাতে নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এই ‘সাগর চোরেরা’ তাদের সিন্ডিকেট ব্যবহার করে অনায়াসে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। তাদের এ দুর্নীতির কারণে রেলওয়ে কর্মচারী ও পোষ্যরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মনিরুজ্জামান মনির বলেন, রেলওয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি, নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধন নিয়ে বারবার মাননীয় রেলপথ মন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে স্বৈরাচারিতামূলক ভাবে ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
তাই নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ অনতিবিলম্বে সংশোধন করে, চাকুরীতে আবেদনের ক্ষেত্রে পোষ্যর সংজ্ঞা সংশোধন, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপককে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা এবং রেলওয়ে নিয়োগ ব্যুরো পূনঃবহাল করাসহ ৮ দফা দাবি পেশ করছি।
রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির ৮ দফা দাবি নিম্নরূপ:
১. “সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা—২০২০” সংশোধনের জন্য ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে গঠিত কমিটি কতৃর্ক বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির প্রস্তাবনা মোতাবেক নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে এবং প্রতিটি রেল কর্মচারীর পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন পোষ্য’র চাকুরি নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছি।
২. রেলওেয়ে পোষ্যদের জন্য সংরক্ষিত কোটা পূরণে প্রকাশিত ৮৬৫ জন খালাসী ও ১১১৩ জন ওয়েম্যানের ফলাফল থেকে অধিকার বঞ্চিত আন্দোলনরত রেলওয়ে পোষ্যদের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক কতৃর্ক অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী খালাসী ও ওয়েম্যান পদে নিয়োগ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনবল নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী জারিকৃত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া এবং আবেদিত চাকুরী প্রত্যাশীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।
৩. জনবল কাঠামো পুনর্গঠনের নামে মাথাভারী প্রশাসন সৃষ্টির আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বাতিল করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা শ্রমিকদের পদ বাড়াতে হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিদের স্থায়ীকরণঃ রেলওয়েতে সকল প্রকার আউটসোর্সিং এর নামে পকেটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে জনবল সংকট সমাধানে রেলওয়ের সকল ট্রেড ইউনিয়ন ও রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সাথে আলোচনা করে সকল জেলা থেকে অসহায়—দরিদ্র রেলওয়ে পোষ্যদের টিএলআর/অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে জনবল সংকট সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।
৪. রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও রেলওয়ে পোষ্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রেলওয়ের ভূমি লীজ প্রদান প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করে অব্যবহৃত ভূমি রেলওয়ে পোষ্য সুপার মার্কেট, বনায়ন, মৎস্য, কৃষি ও গবাদিপশু পালন প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে পোষ্যদের বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটিকে ভূমি লীজ প্রদান ও রেলওয়ের ভূমিতে পিপিপি’র আওতায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ভূমি লীজ দেওয়া হচ্ছে, সে সকল প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলওয়ে পোষ্যদের নিয়োগের বিষয়টি চুক্তিপত্রে উল্লেখ করার দাবি জানাচ্ছি।
৫. অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের ফাইনাল সেটেলমেন্ট এর কাজ সরকার নির্ধারিত দুই মাস সময়ের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করণ ও কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক—কর্মচারীর পোষ্যদের যোগ্যতানুযায়ী দ্রুততার সহিত নিয়োগ সম্পন্নকরণ এবং যে সকল পোষ্যদের নিয়োগ দীর্ঘদিন থেকে অকারণে আটকে আছে, তাদের নিয়োগ সম্পন্ন এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ এর স্থলে ৩২ বছর করার দাবি জানাচ্ছি।
৬. নিয়োগ, ক্রয়, ঠিকাদারী কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিসহ সকল প্রকার দুনীর্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম কতৃর্ক দ্রুততম সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. রেলওয়ে শ্রমিক—কর্মচারী ও পোষ্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে রেলওয়ে হাসপাতাল সমূহে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ—সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। রেলওয়ের শ্রমিক—কর্মচারীর সন্তানদের স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির অধীনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় রেলওয়ে পোষ্য ইন্টারন্যাশনাল—স্কুল—কলেজ—বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় অব্যবহৃত রেল ভূমি লীজ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
৮. অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত শ্রমিক—কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১০ শতাংশ করে পরিত্যক্ত রেল ভূমি লীজের মাধ্যমে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়ের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির উপদেষ্টা আব্দুর রাজ্জাক মল্লিক, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সাইদুজ্জামান শিপন, সহ—সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম ঠাকুর, সহ—দপ্তর সম্পাদক মোঃ মাহাবুব রহমান মানিক, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম কনক, বোনারপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসেন সাবু, সৈয়দপুর শাখার সভাপতি মোঃ শামিম মাহমুদ লিমন সরকার, লাকসাম রেলওয়ে জেলা শাখার আহ্বায়ক মহিউদ্দিন শোয়েব, সদস্য সচিব রাশেদ আনোয়ার, শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক শিপন মিয়া, জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মুক্তুদুর রহমান মাসুদ, রংপুর মহানগর শাখার আহ্বায়ক জাফের ফারুক, চট্টগ্রাম জেলার কার্যকরী সদস্য মোঃ শামিম হোসেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা শাখার কার্যকর সদস্য মোঃ ইমদাদুল হক প্রমুখ। কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ৩ শতাধিক রেলওয়ে পোষ্য অংশগ্রহণ করেন।