তিনি বলেন, গত এক যুগে অর্থাৎ ১২ বছরে সরকার শিল্প,বানিজ্য ও আবাসিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে ১৮ বার।মূল্য বৃদ্ধির যুক্তি ছিলো উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, আমদানি শুল্ক —কর কার্যকর, কয়লা ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। আমাদের বিকল্প প্রস্তাব, গত এক দশকে কুইক রেন্টাল এর নামে ৭০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই লুটপাট বন্ধ করুন।কয়লায় ভ্যাট প্রত্যাহার করুন,বেসরকারি খাতের বদলে সরকারিভাবে তেল আমদানি করুন, উৎস থেকে প্রতিদিন ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করাহয়,দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করুন।
তিনি আরো বলেন, আমরা মাঝে মাঝে শুনি পেট্রোবাংল বলেন আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি গ্যাসের মূল্য বেড়ে গেছে তাই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে, মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু এই কথা সঠিক নয়,কারণ ঃ— ১। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে বিতরণ কোম্পানিগুলো, তার মধ্যে ২ হাজার ৩০০ ঘনফুট গ্যাস দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। বাকি ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলপিজি গ্যাস আমদানি করা হয়। কারণ ঃ—২।বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটি মুনাফায় রয়েছে এবং গ্যাস খাতের সব সংস্থার কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। তাই আমরা মনেকরি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা বন্ধ করা উচিৎ।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক আরো বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেল, লবন, পেঁয়াজ ও শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য নেই যার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছনা।মানুষের আয় যে হারে বেড়েছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য। কারন একটাই, তা হচ্ছে বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ যে নেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল চাল,ডাল,তেল,লবন,পেঁয়াজ নিয়ে তুঘলকি কান্ড দেখে।২০২১ সালে ৪৯ দিনে চালের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকে চাল সিন্ডিকেট লোপাট করেছে প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।২০১৯ সালে পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জনগনের কাছ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কয়েক বছর আগে সম্ভবত ২০১৮ সালে মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট লবনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট করেন।বেশি শীত,বেশীকুয়াশা,বেশি বৃষ্টি ও বেশি খড়া হলে শাকসবজির ব্যবসায়ী ও বাজারে সিন্ডিকেট করে শাকসবজি মূল্য দ্বিগুন থাকে তিনগুন বাড়িয়ে দেয়। হাস্যকর বিষয় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে এবার বাংলাদেশে উৎপাদিত আলু,পোটল,গাজর,শষারসহ সব সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মনেহয়েছিল এগুলোও রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে আমদানি করাহয়।তাই আমরা প্রস্তাব করছি অসাধু মন্ত্রী, আমলা ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দাও।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনা গত ৬ মাসে অন্তত ১০টি, শিক্ষক মারাগেছে ১ জন।এ ধরনের হামলার ঘটনায় তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এটি একটি বেদনাদায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতির জন্য এটি একটি কলঙ্ক। এটি কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।একজন শিক্ষকের যদি জীবনের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে দেশটা এগেবে না।মেধাবীরা আর এই পেশায় আসতে চাইবে না।তাই আমাদের দাবি এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।কিন্তু আমরা বহুদিন যাবত লক্ষ্য করছি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে বেড়াচ্ছে। আমরা মনেকরি স্বাধীন বাংলাদেশে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এখনি এই বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন চৌধুরী, পিডিপি’র মহাসচিব হারুন আল রশীদ খান, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সামছুল আলম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য জুলফিকার আলী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড আনসার আলী দুলাল, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড বিধান দাস, পিডিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাপ্টেন আয়নুল হক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুজ্জামান ফিরোজ প্রমুখ।