এস.কে মাসুদ রানা,সিদ্ধিরগঞ্জ:
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার প্রতিষ্ঠান ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি প্রধান ক্যাশিয়ার হিসেবে এই চাদাঁ তোলেন। তার দাবি, চাঁদার একটি অংশ থানার ওসি কামরুল ফারুকের জন্য বরাদ্দ থাকে। যার কারণে অবৈধ ব্যবসার প্রতিষ্ঠানে থানার কোন অফিসার অভিযান চালালে আনোয়ার নামের ঐ ক্যাশিয়ারকে ফোন ধরিয়ে দিলেই বন্ধ হয়ে যায় পুলিশের অভিযান।
চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং যেসব এলাকা ও প্রতিষ্ঠান থেকে এসব চাঁদা তোলা হয় সেখানকার অনেকের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, আনোয়ার আগে ক্যাশিয়ার ছিল কি না জানি না, এখন আমার কোন ক্যাশিয়ার নেই। অন্যদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইশতিয়াক আশফাক রাসেল জানান, থানার ক্যাশিয়ার আছে কি না আমার জানা নেই। এটা ওসি সাহেব বলতে পারবেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আনোয়ার সাদা পোশাকে থানা এলাকার বিভিন্ন জুয়ার আসর, চোরাই তেল বিক্রেতা, অবৈধ মশার কয়েল কারখানা, আবাসিক হোটেল বোডিং পরিচালিত অসামাজিক কাজের ব্যবসা, মাদকদ্রব্য ও ইয়াবা বিক্রেতা, সরকারী জমির অবৈধ মার্কেট ও বিপণির মালিক, ফুটপাতে ভাসমান হকার ও শিল্প এলাকার ভাঙ্গাহাড়ীসহ বিভিন্ন বেআইনি কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করেন। প্রতি মাসে ১০ লাখ বেশি চাঁদা আদায় করা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
শিমরাইল মোড়ের বাউল শিল্পীদের অফিসের নামে একটি জুয়া ও পতিতা আসর থেকে দৈনিক ১০ হাজার টাকা করে মুরগী রিপনের মাধ্যমে চাঁদা নেন ক্যাশিয়ার আনোয়ার। এই তথ্য নিশ্চিত করেন জুয়া আসরের পরিচালনাকারী। এছাড়াও শিমরাইল মোড়ে সরকারী জমির উপর গড়ে ওঠা ৮টি হোটেল থেকে থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে নেয়া হয় বলে জানান একজন হোটেল মালিক।
এদিকে গোদনাইল বার্মা ষ্ট্যান্ড ও এসওরোড এলাকায় পদ্মা ও মেঘনা অয়েল ডিপোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ চোরাই তেলের দোকান। ঐ সকল চোরাই তেলের দোকান থেকে সাদ্দাম ওরফে মোটা সাদ্দাম নামের এক সোর্সের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা নেয়া হয় বলে জানান স্থানীয় সূত্র।
তবে মাসোহারা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও চোরাই তেলের ব্যবসার কথা অস্বীকার করেছেন সাদ্দাম ওরফে মোটা সাদ্দাম। তিনি বলেন, খোলা বাজারে তেল বিক্রি করার কারণে এ টাকা দিতে হয় ওসিকে তাকে। অন্যথায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিবে পুলিশ।
এ ছাড়াও জাহাজের ফার্নিচার ও স-মিল কারখানায় অবৈধ সেগুন, গামারি ও গর্জন কাঠ ব্যবহার করায় মাসোহারা থানার এলাকায় ৮টি স-মিল মোটা অংকের টাকা নেন ক্যাশিয়ার আনোয়ার।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে থানার ক্যাশিয়ার নন বলে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি থানার কেউ না।’ কিন্তু বিভিন্ন স্পট থেকে চাঁদা আদায়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে আনোয়ার বলেন, ‘চাঁদা নিয়ে কি আমি খাই? চাঁদার টাকা থানার ওসিকে দেই। এই টাকা তার পরিবারের জন্য যায়, এমনকি ওসির বাজারও করে দেই। তিনি একা নন, ক্যাশিয়ার আরো আছে জানিয়ে আনোয়ার বলেন, ‘মোটা সাদ্দাম, মুরগী রিপনসহ আরও কয়েকজন ক্যাশিয়ার আছে। ওসি ও এসআই ফারুককে দিয়ে কিছু থাকলে আমি রাখি। এই আর কি।’
তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, আনোয়ার আগে ক্যাশিয়ার ছিল কি না জানি না, এখন আমার কোন ক্যাশিয়ার নেই। ওসির পরিবারের জন্য টাকা দেয়ার যে দাবি করেন আনোয়ার, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি কামরুল ফারুক টিপ্পনী কেটে বলেন, ‘সাংবাদিকরা এসবের খবরও রাখে?