|| মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ||
ধরাধামে হুমায়ূন আহমেদ নেই প্রায় একদশক। এখনও পাঠকদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে তিনি। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিনে প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানা যায়। তারা বলছেন, এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত বিক্রির দিক দিয়ে নন্দিত এই কথাশিল্পী সব লেখককে ছাড়িয়ে গেছেন। এরপরের স্থানে আছেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, জহির রায়হান, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আজাদ, আহসান হাবিব, রকিব হাসান।
প্রকাশকদের দৃষ্টিতে, ভবিষ্যতেও বিক্রির দিক দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই এগিয়ে থাকবে। পাঠকরা বলছেন, পরের প্রজন্মের কেউও তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কিনা তা সময়ই বলবে।
অন্যপ্রকাশের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যপ্রকাশ ও হুমায়ূন আহমেদ সমার্থক বলতে পারেন। প্রতিবারের মতোই এবারের মেলায় আমাদের বিক্রির তালিকায় তাঁর বই শীর্ষে। প্রথম সারির লেখকদের মধ্যে তিনিই এগিয়ে। তার ধারেকাছেও কেউ নেই।’
অনন্যা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী মো. তারেকের দাবি, ‘হুমায়ূন আহমেদ স্যার এখনও বেস্টসেলার। সব লেখকের মধ্যে তিনি এগিয়ে। পাঠকরা এসেই হুমায়ূন আহমেদের কী বই আছে জিজ্ঞাসা করেন। হুমায়ূন আহমেদের বই চাই তাদের। তাঁর বই সবসময়ই চলেছে, এখনও চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। নতুন লেখকদের কাছে পাঠকরা ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে ঠিকই, কিন্তু মনের মতো পাচ্ছে না।’
অবসর প্রকাশনীর প্রকাশক নুর-ই-মুন্তাকিম আলমগীরের কথায়, ‘হুমায়ূন আহমেদের বই তাঁর জীবদ্দশায় ভালো চলতো। এখনও যতই সময় যাচ্ছে, তাঁকে ঘিরে পাঠকদের আগ্রহ আরও বাড়ছে। এককথায় ভূত-বর্তমান সবাইকে ছাড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদ।’
অনুপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী মো. আরিফ উল্লেখ করেন, এবারের মেলায় বেশি বিক্রি হচ্ছে জহির রায়হান, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং হুমায়ূন আহমেদের বই। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস সম্পর্কিত বই বিক্রি আশাব্যঞ্জক। জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আবদুল কাদের একই তথ্য জানালেন।
আগামী প্রকাশনীর মেলা ইনচার্জ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে লেখক হিসেবে হুমায়ূন আজাদ এগিয়ে।’
বইমেলায় ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ তানভীরের অনুভূতিতে, ‘একেকটি বই মানে একেকটি সুগন্ধি ফুল। যে ফুলের সুগন্ধ যত স্নিগ্ধ, সেই ফুল মানুষকে তত টানে। হুমায়ূন আহমেদ এরকমই কিছু ফুলের বাগান রেখে গেছেন। তাই পাঠকদের প্রথম পছন্দ এখনও তিনি।’
পুরান ঢাকা থেকে বইমেলায় এসেছেন মালিহা সিফাত। তার মতে, ‘হুমায়ূন আহমেদের লেখায় এক ধরনের মোহ রয়েছে। তাঁর একটি বই পড়ার পর আরেকটি পড়ার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমার সাহিত্যের প্রথম পাঠ স্যারের হাত ধরেই। অন্য লেখকদের বইও পড়ি, তবে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতি আমার ভালো লাগা কাজ করে বেশি।’
বইমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণঃ
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদীদের হামলার দেড় যুগ পূরণের দিনে আজ বিকাল ৫টায় তাঁকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আলোচনা সভার শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই। বক্তারা মনে করেন, হুমায়ুন আজাদকে হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাঁর আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাঁকে যথাযোগ্যভাবে সম্মান দেওয়া হবে। আগামী প্রকাশনীর নির্বাহী ওসমান গনীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, কবি আসলাম সানী, প্রকাশক হুমায়ুন কবীর, শায়লা রহমান তিথি, বইমেলার সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ, হুমায়ুন আজাদের কন্যা মৌলি আজাদসহ অনেকে।
মেলার আয়োজনঃ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি: সত্যজিৎ রায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিধান রিবেরু এবং মোস্তাক আহমাদ দীন। সভাপতিত্ব করেন ম. হামিদ।
বইমেলায় নতুন বই
মেলার ১৩তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭২টি। এরমধ্যে গল্পের বই ১০টি, উপন্যাস ১৫টি, প্রবন্ধ ৪টি, কবিতা ১৪টি, গবেষণা ১টি, শিশু সাহিত্য ৪টি, জীবনী ৩টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৫টি, বিজ্ঞান নিয়ে ২টি, ইতিহাস বিষয়ে ৩টি, স্বাস্থ্য ১টি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ৪টি।