শেখ সাখাওয়াত হোসেন,পাবনা থেকে :
চোখের আলো না থাকলেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান অনেকে। জীবন সংগ্রামী এমন ৬ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অংশ নিয়েছিলেন এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট এইচএসসি পরীক্ষায়। প্রতিবন্ধীদের আশ্রয়স্থল আলোকিত মানুষ গড়ার কারখানা পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৬ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সবাই কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। কৃতিত্ব অর্জনকারী ৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেন- পাবনার নাজিরপুর গ্রামের মো. মোয়াজ্জেম প্রামানিক’র ছেলে মো. রুহুল আমিন (৪.৬৭)। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বুজিয়াম গ্রামের ইউনূস আলীর ছেলে ইউনূস আলী (৪.০৮), রাজশাহী শাহমখদুমের পবা নতুনপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪.০৮), খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সৎসঙ্গ দেরুলি গ্রামের কানাই মন্ডলের ছেলে মো. গলক মন্ডল (৪.৩৩), সিরাজগঞ্জের সয়েরাবাদের বাঔতারা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে মো. খোকন (৪.৪২) এবং সিরাজঞ্জের উল্লাহপাড়ার বাঙলাপ্রতাপ গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে মো. রাকিব হাসান (৪.৩৩)।
জীবন সংগ্রামী এই শিক্ষার্থীর মধ্যে ব্রেইল পদ্ধতিতে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজে রাকিব হাসান এবং বাকীরা দোগাছী কলেজ কেন্দ্র থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পাবনার সিঙ্গা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন জানান, ‘জন্মগতভাবেই তারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে তাদের মধ্যে। তারা সোনালী ভবিষ্যৎ অর্জনের যে স্বপ্ন দেখছে তা বাস্তবায়নে কাজ করছে মানবকল্যাণ ট্রাস্ট। ব্রেইল পদ্ধতিতে শ্রুতি লেখকের সাহায্যে তারা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ্রহণ করে থাকে, কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য সেই সুযোগ নেই। সরকার যদি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রেইল পদ্ধতি চালু করে তাহলে প্রতিবন্ধীরাও উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবে।
’উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রুহুল আমিন বলেন, ‘অন্ধ হয়ে জন্ম নেয়ার পর থেকে সমাজের লোকজন আমাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখতেন। আমরা পরিবারের জন্য বোঝা- এমন ভাবা হতো। কিন্তু আমরা পরিবারের বোঝা হতে চাইনি। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও মানুষের জন্য বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে চাই। সরকারের আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা পেলে সাফল্য অর্জন করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব। ’উত্তীর্ণ আরেক শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘আমাদের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে আমাদের মানবকল্যাণ ট্রাস্টের অবদান ই সবচেয়ে বেশি। কারণ তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে আমরা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা গর্বিত।
’জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলার সিঙ্গা গ্রামের মানবকল্যাণ ট্রাস্টে আশ্রয় নিয়ে ৬ জন পরীক্ষার্থীর মতো এই ট্রাস্টে ৫৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ১২ জন শারীরিক, ১৮ জন বাক প্রতিবন্ধীসহ ১৪৫ জন শিক্ষার্থী, ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ সকল দায়-দায়িত্ব বহন করছে আবাসিক এই প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সকল শিক্ষার্থীরা এখানে এসে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রাথমিকের গন্ডির বাইরে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনও করছেন অনেকে। এদের মধ্যে ৫০ জন পবিত্র কোরআনে হাফেজ ও ২৫ জন শিক্ষার্থী এম.এ পাশ করে বিভিন্ন কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে সহযোগিতা পেলে আরো এগিয়ে যাবে এই সকল অসহায় মানুষগুলী।