হযরত বেল্লাল,সুন্দরগঞ্জ থেকে♦♦
তৃতীয় ধাপে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ঘোষিত তফশীল মোতাবেক ৫ মে বৃহস্পতির ছিল মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই। এতে দেখা গেছে ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র বৈধ এবং সঠিক বলে বিবেচিত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে এখনো। নৌকা মার্কা না থাকলেও দলীয় একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিপাকে আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগি অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকগণ। এছাড়া জাতীয় পাটির ২ জন এবং স্বতন্ত্র ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফুল আলম সরকার লেবু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সফিউল ইসলাম আলম, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ আখতারুজ্জামান আকন্দ শাকিল, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ খয়বর হোসেন সরকার মওলা, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, গোলাম কবির মুকুল, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সদস্য দুর্লভ মন্ডল।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন সরদার, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন লিখন মিয়া এবং মো. এরশাদ আলী।
অপরদিকে বৈধ পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ১০ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শান্তিরাম ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামীলীগের সমর্থক ও কর্মী মো. রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, যেহেতু এবারে দলীয় মার্কা নেই, সেইহেতু প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক আওয়ামীলীগের নেতাকে বেচে নিয়ে ভোট দিতে হবে। অনেক প্রার্থী রয়েছে, নব্য ও হাইব্রিড আওয়ামীলীগ। তাদের ক্ষেত্র বিবেচনা করে ভোট দিতে হবে। তবে যেহেতু একাধিক আওয়ামীলীগ প্রার্থী সেক্ষেত্রে নেতাকর্মী ও সমর্থকগণ একটু বিপাকে রয়েছে।
দহবন্দ ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার আতোয়ার রহমান জানান, ভোটার আলোচনা শুধু পোষ্টারে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মতবিনিময় সভার মধ্যে সীমাবন্ধ। সাধারণ ভোটাদের মাঝে তেমন কোন সারা নেই। তার ধারণা ভোটের প্রতি মানুষের খুব বেশি অন্তরিকতা নেই বললে চলে। তার দাবি জামায়াত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায় প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল ইসলাম সরকার রেজার বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন চাপ বা নির্দেশনা নেই। সেক্ষেত্রে প্রার্থীগণ নিজ যোগ্যতা বলে সামনে এগিয়ে যাবেন। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থগণ তাদের পছন্দের নেতাকে ভোট দিবেন। একাধিক দলীয় প্রার্থী থাকার কারণে অনেকে বিপাকে রয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফুল আলম সরকার লেবু জানান, যেহেতু তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক সে কারণে সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে নেতাকর্মীগণ তাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মিসেস আফরুজা বারীর বলেন, উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় নেতাকর্মীগণ কাজ করবেন। দলের বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ নেই।
আগামী ১২ মে প্রার্থীতা প্রত্যাহার, ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৯ মে ভোট গ্রহণ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মশিউর রহমান।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোটারদের সুবিধার্থে ২৮টি ভোট কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১১১টি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৩৯টি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ২২টি। উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৯ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ১৫৯ জন এবং হিজড়া ভোটার ১ জন। তুলনামুলকভাবে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোয়ার হোসেনের বলেন, ভোটারদের সুবিধার্থে উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। নির্বাচন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।