গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণাধীন হরিপুর-চিলমারি তিস্তা পিসি গার্ডার সেতুর দেড়’শ গজ দুরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একটি অসাধূ ব্যবসায়ী মহল। প্রশাসনের নিষেধ ও আদেশ অমান্য করে দেদারচ্ছে বালু উত্তোলন করছেন মহলটি। সেতু আশপাশ এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে যে কোন মুহূর্তে সেতুটি দেবে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, দাবি সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষের।
গত এক সপ্তাহ ধরে সেতুর উত্তর ধারে হরিপুরের পাত্রখাতা মৌজায় বালু উত্তোলন করছেন জেনে মঙ্গলবার উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি মো. মাসুদুর রহমান পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেন। এ সময় বালু উত্তোলনকারি প্রভাবশালী মহলের এক নারী নেত্রীর সাথে কথাবার্তা বলেন এবং বালু উত্তোলনের নিষেধ করেন। কিন্তু প্রশাসনের আদেশ ও নিষেধ তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলটি বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে।
স্থানীয় ডাঙ্গার চরের মো. সোলেমান আলী বলেন, সেতুর পাশে দীর্ঘদিন ধরে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যারা সচেতন ব্যক্তি তারাই যদি এসব অসচেতন কাজ করে, তাহলে সমাজের ন্যায় ও অন্যায় কে দেখবে। সেতু রক্ষার স্বার্থে নিজ দায়িত্ব থেকে এসব অন্যায় কাজ বন্ধ করতে হবে। সেতুটি আমাদের চরবাসির জন্য একটি বড় সম্পদ।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, নেতার চেয়ে দল এবং দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশের সম্পদের ক্ষতি করবে, সে দলের হোক না কেন তাকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বালু উত্তোলনকারি মহলটির সদস্যদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. নাজির হোসেন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিত্বে সহকারি কমিশনার ভুমিকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এসে বালু উত্তোলন করবেন। সেতুটি দেশের সম্পদ, সেটি রক্ষা করার জন্য সকলকে ভুমিকা রাখতে হবে।
সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল রহমান প্রামানিক বলেন, সেতুর আশপাশ এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে যে কোন মুহূতে সেতুটির বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বালু উত্তোলনের কারণে বিশাল অগভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
চলতি বছরের মার্চ মাসে যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারি বাসির স্বপ্নের তিস্তা পিসি গার্ডার সেতু। ইতোমধ্যে সেতুর ৯৫ ভাগ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকী কাজ শেষে সময়সূচি ঠিক করে উদ্বোধন করা হবে। সম্প্রতি সেতু পরিদর্শনে এসে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনার্থ এ কথা বলেন।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি গাইবান্ধার সার্কিট হাউজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুর চিলমারি তিস্তা সেতুর ভিত্তি উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের পর ২০২১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে সংযোগ সড়কসহ সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরিওতুল্লাহ মাষ্টারের বলেন, ২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু করা হয়। ২০১২ সালে এসে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এরপর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল রহমান প্রামানিকের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণ কাজের সুচনা হয়।
দ্বিতীয় বারের মত ২০২০ সালের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর- চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারি সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধীত) প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এলজিইডির বাস্তবায়নে সেতুটি নির্মাণ করছেন চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুটি নির্মাণে অর্থ প্রদান করছেন সৌদি ডেভেলোপম্যান্ট ফান্ড। এতে ব্যয় হবে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।