।।এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।।
৬ মে ২০২১ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জননেতা শেখ শওকত হোসেন নিলু’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী ও এডভোকেট আবদুল মোবিনের ৬ষ্ট মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতে অনেকটা সময়ই চলে গেছে। নদীর পানিও অনেক চলে গেছে। নিলু ভাই-মোবিন ভাই দুইজনের সাথেই আমার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। নিলু ভাই অন্যরকম ভাবেই আমায় স্নেহ করতেন, সম্মান করতেন, মূল্যায়ন করতেন। তার লেখা বই “পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ : আমার দেখা রাজনীতির ৪৩ বছর” রচনার প্রথম থেকে প্রকাশ পর্যন্ত আমাকে জড়িত রেখেছেন। এমনকি ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করার পরও আমার সাথে নিলু ভাইয়ের সম্পর্কের বোন অবনতি হয় নাই। ১৯৯১ সাল থেকে সম্পর্ক প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল-পিএনপি, ৭ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (নিলু), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, সমমনা ৮ দল, ১৮ দলীয় জোট, ২০ দলীয় জোট, অভিমান করে জোট ত্যাগে বাধ্য থেকে শেষ বিদায় পর্যন্ত নিলু ভাইয়ের সাথে সম্পর্কটা ছিল আমার। কোন বিষয়ের আলোচনার প্রয়োজন হলে তিনি যেখানেই থাকুন বা আমি যেখানে বা যে অবস্থানেই থাকিনা কেন ফোন করে ডাকতেন। ভুইয়া আসেন একটু আলাপ করি। হয়তো তার যুক্তি আমি গ্রহন করতাম না বা তিনি আমার যুক্তি গ্রহন করতেন না কিন্তু এ নিয়ে আলোচনায় কখনো তিক্ততা সৃষ্টি হতো না। কোন উপদেশ দিতেও ভুল করতেন না। আমি একটু একটু লেখা-লেখি করতাম। যখনই কোন লেখা প্রকাশ হতো। দুটি ফোনে আমার ঘুম ভাংতো। তারা দুজন হলেন প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান ও শেখ শওকত হোসেন নিলু। তার দুজনই আজ নেই। রাজনীতিতে প্রধান-নিলু একটা সময় তরুনদের কাছে খুবই জনপ্রিয় জুটি ছিল। আকাল রাজনীতিবিদরা লেখাপরা করতেই চাননা। যদিওবা করেন নিজের রাজনীতির বাইরে অন্যকোন বিষয়ে খুব একটা পড়তে চাননা। সেই সময় এটা স্বীকার করতেই হবে নিলু ভাই ছিলেন ভিন্ন। তিনি রাজনীতির বিষয়ে যে কোন বই পড়তেন, জানতেন বিশ্লেষন করতেন। নিজেও খো-লেখি করতেন। অন্যদেরকেউ লেখা-লেখির বিষয়ে উৎসাহিত করতেন। তাঁর লেখার হাতও ছিল শক্তিশালী ও সুন্দর। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তার কোনো কোনো প্রবন্ধ পড়েই বুঝা যেত। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন ভুল ছিল। এটি স্পষ্টভাবে বলতেন নিলু ভাই। আর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই বিএনপির সাথে তার ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি মহাসচিবের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি আলোচনা সভায় তিনি স্পষ্টভাবেই এটি বলেছিলেন। আর এটিকেই ইসু্য করে বিএনপি মহাসচিব ও তার একান্ত দাস অনুগতরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন জোট থেকে নিলু ভাইতে বের করার। এবং তারা সফলও হয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই স্বীকার করেছেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা ভুল ছিল। তাহলে কি তার উচিত নয় শেখ শওকত হোসেন নিলু’র কবরে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। রাজনীতিতে মেধা শূণ্যতা চলছে, এসময় ভাল মানুষ রাজনীতিতে টিকেই থাকতে পারছে না। ভাল মানুষ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে শূণ্যেও কোঠায়। কারণ আজকাল রাজনৈতিক টোকাইরাও মনে করেন তারা অনেক বড় নেতা। তাঁর মেধাবী রাজনৈতিক জীবন আজকের রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য উজ্জল উদাহরন। শওকত হোসেন নীলুর জন্ম ১৯৫২ সালের ৩ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার গিমডাঙ্গা গ্রামে। গোপালগঞ্জেই ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ শওকত হোসেন নীলু। পরে এরশাদের আমলে তার দল জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন তিনি। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষক পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নীলু। জাতীয় পার্টি ছেড়ে ২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এনপিপি গঠন করেন নীলু। ২০১১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ওই বছর সেপ্টেম্বরে বিএনপি জোট ছাড়েন নীলু। ২০ দলীয় জোটের কয়েকটিসহ মোট ১১টি দল নিয়ে এনডিএফের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট আবদুল মোবিনের সাথেও আমার ১৯৯১ সালেই পরিচয়। সেই থেকে সব শেষ দিন পর্যন্ত সম্পর্ক ছিল। অনেকটাই সহজ-স্বরল মানুষ ছিলেন। রাগ একেবারে ছিলনা বললেই চলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এডভোকেট আবদুল মোবিন আমৃত্যু লড়াই করেছেন। কোন লোভ-লালসা, ভয়-ভীতির কাছে তিনি আত্মসমর্পন করেন নাই। এডভোকেট আবদুল মোবিন ১৯৫২ সালের ৩০ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার, বরুড়া উপজেলাধীন খোশবাস ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খোশবাস গ্রামের এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আবদুল খালেক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। মাতা মরহুমা মাফিয়া খাতুন ছিলেন একজন সুগৃহিনী। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে মরহুম আলহাজ্ব এডভোকেট. আবদুল মোবিন মোহন ভাই ছিলেন দ্বিতীয়। সেই ১৯৭৯ সাল থেকে আরম্ভ করে বিগত ৩৬ বৎসরে এদেশে যত গুলি জাতীয় পর্যায়ের জোট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সব কটি জোটেই মরহুম আলহাজ্ব এডভোকেট আবদুল মোবিন ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি গভীর ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। যেমন ১৯৮০ সালে ন্যাশনাল ফ্রন্ট, পরবর্তী পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যজোট। তসলিমা নাসরিনের বিরোদ্ধে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ। বি এন পি’র নেতৃতাদীন তৎকালীন ৭ দলীয় ঐক্য জোট। আগ্রান প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি। সব শেষ বলতে চাই নিলু ভাই ও মোবিন ভাই দুজনই ভাল মানুষ ছিলেন। তারপরও মানুষ হিসেবে হয়তো কিছুটা ভুল-ত্রুটি হতেই পারে তাদের জীবনে। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার ছোটো-খাটো ভুল ক্ষমা করে জান্নাতে সুউচ্চ স্থান দেবেন। জননেতা শেখ শওকত হোসেন নিলু’র ৪র্থ ও এডভোকেট আবুল মোবিনের ৬ষ্ট মৃত্যুবার্ষিকীতে মহান আল্লাহ’র দরবারে প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন ও দান করুন জান্নাত।
[ মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহ্বায়ক, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন ]