কে এম রাজীবঃ
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার স্বাক্ষর পাহাড়তলী বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা হতে রক্ষা করে,অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ ২০২১ সালের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা, পাহাড়তলী বধ্যভূমি কমপ্লেক্স, স্মৃতিস্তম্ভ করা, বধ্যভূমির জন্য প্রাক্কলিত অর্থ ছাড় ও লাইট এন্ড সাউন্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা ও বধ্যভূমির ইতিহাস তুলে ধরার দাবিতে মানববন্ধন ও উম্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন করেছেন ” পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষা পরিষদ “।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩ টায় পাহাড়তলী বধ্যভূমির সামনে এ মানববন্ধন ও উম্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পাহাড়তলী বধ্যভূমির ১ দশমিক ৭৫ একর জমির সম্পূর্ণ অংশ ২৬ মার্চের মধ্যে অধিগ্রহণ করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এবং অবিলম্বে বধ্যভূমির পুরো জমি অধিগ্রহণ না হলে লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। এসময় তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে মোট ১১১টি বধ্যভূমি থাকলেও একটি বধ্যভূমিও রক্ষা করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি শুধু পাহাড়তলী বধ্যভূমি টিকে আছে আমাদের মামলার কারণে। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী রায়েরবাজার ও পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষার নির্দেশ দিলেও রায়ের বাজার বধ্যভূমি সংরক্ষণ হলেও নানা ষড়যন্ত্রে অদ্যবদি পাহাড়তলী বধ্যভূমি এখনো সংরক্ষিত হয়নি। এই বধ্যভূমি রক্ষার জন্য লড়াই করাতে আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে। টাকার প্রস্তাব দিয়েছে এবং জমির প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি কোনো হুমকি ধামকি কিংবা কোনো প্রস্তাব আমাকে টলাতে পারেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, এটা সংরক্ষণের কথা ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। তখনো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হয়নি। আমরা কোনো স্মৃতিই সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ বধ্যভূমি নিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে গেলে বারবার মামলার অজুহাত দেয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতের আদেশও এনেছি কিন্তু প্রকল্প আর আগায় না। এই বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য প্রায় পৌনে সাত কোটি টাকা প্রাক্কলন ধরা হয়েছে। তাদের বলেছি, আমাদের ২০১৪ সালের রায় আছে, ২০১৮ সালের আইন সেখানে খাটবে না। দুই সপ্তাহ আগেও মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি, বলেছি এটা আদালতের রায় অনুসারে না হলে আমরা মামলা করব। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, প্রয়োজনে মন্ত্রী থেকে বিশেষ বরাদ্দ নেবেন। ২৬ মার্চের আগেই অধিগ্রহণ করতে হবে। এখানে হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। তা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।
সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রমা সভাপতি রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও উম্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক হোসাইন কবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, শহীদ পরিবারের সদস্য মো. শাহাবুদ্দিন আঙ্গুর, রাউফুল হোসেন সুজা ও আনোয়ার হায়দার, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির চট্টগ্রাম জেলার কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক অনিক চৌধুরী, বিজয় একাত্তর প্রতিষ্ঠাতা ডা. আর কে রুবেল। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যকার আহমদ কবীর, নাট্যজন মোস্তফা কামাল যাত্রা, অধ্যক্ষ সুকুমার দত্ত, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কাজল বরণ চৌধুরী, প্রতিকৃত সাংস্কৃতিক সংসদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. আলাউদ্দিন ভুঁইয়া, জোবায়দুর রশিদ, মাসরুর জামান মুকুট, সাজ্জাদ হোসেন ও লোক থিয়েটারের খোকন মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি রচিত গীতি নকশা ‘বধ্যভূমি’ পরিবেশন করে নাট্যাধার।এসময় কর্মসূচিতে অংশ নেয় শোভন থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।