হযরত বেল্লাল,সুন্দরগঞ্জ◊◊
চলতি বোর মৌসুমের শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে চারা রোপনে দিনমজুর সংকট দেখা দিয়েছে। দেরিতে হলেও ইতিমধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ শুরু করেছে কৃষকরা। কিন্তু দিনমজুর সংকটের কারণে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। এমনিতেই উপজেলায় কৃষি কাজের দিনমজুরের সংখ্যা অনেক কম। তাছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে অনেক দিনমজুর কৃষিকাজ করতে রাজি হচ্ছে না। চড়া দামেও মিলছে না দিনমজুর।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফিরে দেখা গেছে, প্রচন্ড ঠান্ডার পরও গত ১০দিন হতে বোরো চারা রোপন শুরু করেছে কৃষকরা। নিম্ন শ্রেণির কৃষক ও বর্গা চাষিরা পরিবার পরিজন নিয়ে বোর চাষাবাদের কাজ করছে। কিন্তু যেসব কৃষক দিনমজুরের উপর নির্ভরশীল তারা বিপাকে রয়েছেন। বীজতলায় চারার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে দ্রুত ক্ষেতে চারা রোপন করার জরুরী হয়ে পড়েছে দাবি অনেক কৃষকের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা, চলতি মৌসুমে বোর চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর। গত বছরের নভেম্বর মাস হতে কৃষকরা বীজতলায় বীজ ফেলতে শুরু করে। সে মোতাবেক চলতি বছরের জানুয়ারী মাস হতে চারা রোপন শুরু করতে হবে।
উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের কৃষক বাবু মিয়া জানান, ইতিমধ্যে তিনি নিচু এলাকার প্রায় দুই বিঘা জমিতে চারা রোপন করেছেন। শুধুমাত্র চারা রোপনে দিনমজুরি দিতে হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় ১ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে। দিনমজুরের মজুরি দিতে হচ্ছে ৫০০ হতে ৫৫০ টাকা।
রামজীবন ইউনিয়নের কৃষক ছবিয়াল মিয়া জানান, ৫০ টাকা মজুরি বেশি দিয়েও দিনমজুর পাওয়া যাচ্ছে না। ঠান্ডার কারণে অনেকে কৃষিকাজ করতে চাচ্ছে না। বীজতলায় চারার বয়স বেশি হওয়ার কারণে দ্রুত চারা রোপন করতে হচ্ছে। সে কারণে বিঘা প্রতি ১ হাজার টাকা বেশি দিয়ে চারা রোপন করে নিতে হচ্ছে।
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের বর্গাচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, দিনমজুরের মজুরি দেয়ার টাকা নেই। সে কারণে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চারা রোপন করছি। দিনমজুর দিয়ে কাজ করলে চাষাবাদে তার লোকসান হবে।
সোনারায় গ্রামের দিনমজুর মোনারুল ইসলাম জানান, কনে কনে ঠান্ডায় পানির মধ্যে কাজ করা অত্যন্ত কষ্টকর। পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে। বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি, সেই তুলনায় মজুরি বেশি দেয়া দরকার কৃষকদের। কিন্তু অনেকে বেশি মজুরি দিতে চায় না।
দহবন্দ ইউনিয়নের দিনমজুর সুরুজ মিয়া জানান, ৫০০ টাকা দিনমজুরি দিয়ে এখন আর চলে না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু মজুরি বাড়েনি খুব বেশি। ঠান্ডায় একটি কাজ করলে আর একদিন করতে ইচ্ছা করে না। তাছাড়া ঠান্ডার কারণে নানাবিধ রোগব্যাধি দেখা দেয়।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ছামিউল ইসলাম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে চারা রোপন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নিচু জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছে কৃষকরা। দিনমজুর সংকট নেই, তবে ঠান্ডার কারণে অনেকে পানিতে নেমে কাজ করতে চাচ্ছে না। আশা করছি বৈরি আবহাওয়া কেটে গেলে এ সমস্যা দুর হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রাশেদুল কবির জানান, বৈরি আবহাওয়া কেটে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে বোর চারা রোপন শেষ হয়ে যাবে। বোরো চাষাবাদে বেশি দিনমজুর লাগে না। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে দিনমজুরা পানিতে কাজ করতে চাচ্ছে না।
Tags: বোরো