হযরত বেল্লাল,সুন্দরগঞ্জ থেকে◊◊
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির উপরের অংশ অর্থাৎ (টপ সয়েল) ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি অধিদপ্তর। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠা ইট ভাটায় চলে যাচ্ছে আবাদি জমির উর্বর মাটি। যার কারণে আবাদি কৃষি জমি দিন দিন পুকুর, ডোবা, নালা এবং নিচুঁ জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। এমনকি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। স্থানীয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অসচেতন জমি মালিকের সাথে আতাত করে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আবাদি জমির (টফ সয়েল্ট) উর্বর মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার অনেক কৃষক মৎস্য চাষ করার জন্য আবাদি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে হরহামেশাই। এতে করে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে কৃষি জমি দারুনভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
সরকারি বিধি মোতাবেক পরিত্যাক্ত গো-চারণ ভূমি, নিচুঁ জলাশয়ের ধারে, নদীর ধারে এবং জনশূন্য এলাকায় ইট ভাটা গোড়ে তোলার বিধান রয়েছে। অথচ সে সব বিধি নিষেধ উপেক্ষা রাস্তার ধারে, দো-ফলা, ত্রি-ফলা আবাদি জমির মধ্যে এবং জনবসতিপূর্ন এলাকায় দিনের পর দিন গড়ে উঠছে এক একটি ইট ভাটা। সে কারণেই পরিবেশ দূষণসহ আবাদি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রশাসনের নাকে ডগার উপর দিয়ে ইট ভাটা মালিকরা সরকারি বিধি না মেনে আবাদি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায়।
সরেজমিন উপজেলার রামজীবন, বামনডাঙ্গা ও ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর বেকাটারি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, রাজু মিয়ার আবাদি জমির উর্বর মাটি নিয়ে যাচ্ছে জনৈক ইট ভাটা মালিক। কথা হয় রাজু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘জমিটি উঁচু সে কারণেই ইট ভাটায় মাটি দেয়া হচ্ছে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২ হতে ৩ বছর ওই জমিতে আবাদ ভালো হবে না। এরপর আস্তে আস্তে ভালো আবাদ হবে’। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমির ১ ফুট করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইট ভাটা মালিক দিচ্ছে ৯ হতে ১০ হাজার টাকা’।
এছাড়া, অবৈধ যানবাহন কাঁকড়া গাড়িতে বেপরোয়াভাবে মাটি বহনের ফলে কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনকি ধুঁলিবালিতে পথচারীদের চলাফেরার ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বেপরোয়া চলাফেরার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো সড়ক দূর্ঘটনা।
কলেজ ছাত্র নাহিদ হাসান বলেন, একদিকে মাটি কেটে ফসলি জমি পুকুরে রূপান্তরিত হচ্ছে অন্যদিকে ইট ভাটার মাটির ট্রাক চলাচলে রাস্তাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আর রাস্তার পাশের মানুষ ধুলাবালির কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাঙা রাস্তা দিয়ে বয়স্ক মানুষের চলাচল কষ্টকর। এছাড়া গর্ভবতী নারীসহ অন্যান্য অসুস্থ মানুষকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই ভাঙা রাস্তা। ইটভাটার আধিক্যের কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছের ফলগুলো এখন আর আগের মতো ফলে না। কিংবা আকৃতিও অদ্ভুতভাবে ছোট হয়ে যাচ্ছে।
রামজীবন ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হুদা বলেন, মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে অনুজীবের কার্যাবলী আছে, তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে।
তিনি আরও জানান, মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এবিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। এরপর আমি নিজেই কাঁকড়া মালিক ও চালকদের আবাদি জমি থেকে মাটি কাটতে নিষেধ করি। কিন্তু নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা কোন তোয়াক্কা না করে নিয়মিত মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল কবির জানান, ‘আবাদি জমির উর্বর মাটি ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়ার কারণে নানাবিধ ফসলের ফলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। আবাদি জমির মধ্যে ৬ ইঞ্চি হতে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উর্বর মাটি থাকে। যা ফসল উৎপাদনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অথচ সে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়’।
অপরদিকে ইট ভাটার ধোঁয়া পরিবেশ দূর্ষণসহ ফসলের দারুন ক্ষতি করছে। জনবসতি পূর্ণ এলাকায় ইট ভাটা গড়ে উঠায় নারিকেল, সুপারি, খেঁজুর, তালসহ বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষের ফলন ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।
Tags: ফসলি