ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সুদের টাকা না দেয়ার অভিযোগ এনে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের লেবার সর্দার মামুনুর রশিদ (৪৮)’কে সিনেমা স্টাইলে তুলে নিয়ে উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত মহিলা ভাইস নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত ওই ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
গত শনিবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার চাটশাল নামক গ্রামের রাস্তায় মাটিকাটা চলাকালীন সময়ে ওই সর্দারকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়।
স্থানীয় ও কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকেরা জানান, রাস্তায় মাটিকাটা চলাকালে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের ছেলে সহ অপরিচিত ৭/৮ জনের একটি দল ৪টি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রকল্পের সর্দার মামুনুর রশিদকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় প্রকল্পের মহিলা শ্রমিকরা বাধা দিলে তারা জানান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তারের নির্দেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হ”েছ কিছুক্ষণ পর ফেরত পাঠানো হবে।
ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদ জানান, গত ১ বছর পূর্বে আমার গ্রামের লিটন, মনোয়ার, গোলবাহার, মাহাতাব ও আমি সহ ১১ জন মিলে সপ্তাহে প্রতি হাজারে ১০০ টাকা সুদে সর্বমোট ৫৮ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এরপর ১ বছরের মধ্যে সুদে-আসলে ৭৫ হাজার টাকা ফেরত দিলেও তিনি আরও অতিরিক্ত টাকা দাবি করে আমাকে ৭/৮ জন মিলে একটি বাগানে তুলে নিয়ে গিয়ে চর, থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, লাথি দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে মারধর করে। এ ছাড়াও সুদের টাকা লেনদেনের কোন ধরনের চুক্তিপত্র না থাকায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই আজিজুল ইসলাম তিনটি সাদা ষ্ট্যাম্পে জোর পূর্বক সহি সাক্ষর করে নেয়। এরপর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার আমার গালে চর মারতে মারতে বলে আজকে তোকে শেষ করে ফেলবো। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাকে ঠকানোর জন্য অনেক চক্রান্ত করেছিস। তোর কোন নেতা আছে এখান থেকে নিয়ে যায় আমিও দেখতে চাই। তারপর আমাকে ছেড়ে দিলে আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান কবিরুল ইসলাম প্রধানের নিকটে গেলে তিনি লোকজনকে সাথে পাঠিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
এ ব্যাপারে নব-নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, মামুনুর রশিদ নামের ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গত প্রায় দুই বছর পূর্বে তিনি আমার নিকট থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়েছেন তার সুদ আসল এক টাকাও পরিশোধ করেননি। আমার ম্যানেজার টাকা চাইতে গেলে টাকা না দিয়ে তিনি আমার কাছে এসেছিলেন। সেখানে অরুপ নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা সহ অনেকে উপ¯ি’ত ছিলেন। সবার উপ¯ি’তিতে তিনি আগামী এক মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার কথা বলে চলে যান। এরপর বিকেলে নির্বাচনী পূর্ব শত্রæতার জের ধরে কবিরুল চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে ইউএনও, ওসি, তদন্ত ওসি, সহ আরও অনেকে এসেছিলেন এবং বিষয়টি সবাই জানেন।
আজ ২৭ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। ২নং পালশা ইউপি চেয়ারম্যানকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
একইদিনে বিষয়টি নিয়ে ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনা¯’লে আমরা কেউ যাইনি। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার সত্যতা নিয়ে ২নং পালশা ইউপি চেয়ারম্যান কবিরুল ইসলাম প্রধানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এই বিষয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। দেখা যাক কি হয়।