আজ ২৭ জুলাই বুধবার দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, টিকেট ম্যানেজমেন্টে সহজের দুর্বলতা ও অদক্ষতাকে আড়াল করতেই কাউকে অংশীজন সভার সদস্য করার মাধ্যমে মূল দোষীদের বাঁচানোর পায়তারা করছে রেলওয়ে প্রশাসন। অনলাইন টিকেটিং সিস্টেমের দায়িত্ব সহজ ডটকমকে দেওয়া হলেও পূর্বের বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত সিএনএস এর ভূত কিন্তু রেলওয়েকে ছাড়েনি।
সহজ সেই সিএনএস এর সকল কর্মকর্তাকেই তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করে। সারাদেশে সিএনএস এর হয়ে কাজ করা বিতর্কিত সকল কর্মচারীই এখন সহজ এর হয়ে কাজ করছে। তাদেরকে চাকুরীচ্যুত না করায় সেই টিকেট কালোবাজারী টেকনিশিয়ানরাই বহাল তবিয়তে তাদের টিকেট ব্লাকিং চালাতে সক্ষম হচ্ছে।
৫০% টিকেট অনলাইনে দেওয়া হয় কিন্তু সিস্টেম লসের কারণে ৪০% টিকেটই কালোবাজারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। টিকেট কালোবাজারীরা হাই স্পিড ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তারা যখন হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যবহার করে, সাধারণ যাত্রীরা তখন টিকেট কাটতে সক্ষম হন না।
রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি বলেন, অনলাইনে যারা টিকেট কাটবেন তাদের শতভাগ যাত্রীরই নাম, বয়স ও মোবাইল নাম্বার টিকেটে থাকতে হবে। যাত্রী যখন ট্রেনে ভ্রমন করবেন তখন অবশ্যই ভোটার আইডি নিয়ে ট্রেনে ভ্রমন করবেন।
ট্রেনে কর্তব্যরত ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনার যখন টিকেট চেকিংয়ে যাবেন তিনি ভোটার আইডি কার্ডের সাথে টিকেটের আইডি নাম না মিললেই ঐ যাত্রীকে জরিমানা করবেন এই প্রক্রিয়ায় শত ভাগ অনলাইন টিকেটের কালোবাজারী ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করি।
এছাড়াও কাউন্টারের টিকেন ব্লকিং সিস্টেম বন্ধ করতে হবে। কাউন্টারে কর্মরত বুকিং এর কর্মচারীদের রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা গেলেই টিকেটিং সিস্টেমে অনেকটা স্বস্তি ফিরে আসবে।
এ সকল সিস্টেম এপ্লাই না করে সহজ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে পুরো জাতির কাছে বিতর্কিত করা হয়েছে। বড় বড় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি আড়াল করতে রেলওয়ের সাধারণ কর্মচারীদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে।
মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং যে সিস্টেম, সেই সিস্টেমে টিকেটের জন্য আবেদন না করায় তার আবেদন অগ্রাহ্য হয় আবার তিন দিনের মধ্যে তিনি তার টাকাও ফেরত পান।
এই বিষয়টি এখন জাতিই জানে। কিন্তু রেল প্রশাসন তাকে অংশীজন সভার সদস্য করে তার সেই আবেগতাড়িত আন্দোলনকেই সমর্থন দেয়, অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী জাতীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে প্রায় এগার কোটি যাত্রী পরিবহন করে।
এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নিজস্ব মন্ত্রণালয় রয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম—নীতিকে তোয়াক্কা না করে কোনরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অন্য একটি সরকারি সংস্থা অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনেই সহজ তথা রেলওয়ের বিরুদ্ধে যে রায় প্রদান করে তা সম্পূর্ণরূপে বিচারিক নীতিমালার পরিপন্থি।
তিনি আরো বলেন, আরেকটি বিষয় স্পষ্ট যে, জনবল নিয়োগে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনার পরও শুধুমাত্র রেল প্রশাসন উদাসীনতার কারণে সময়মত জনবল নিয়োগ না হওয়ায়। প্রায় ১১ কোটি যাত্রীর সেবা প্রদানে অপ্রতুল জনবল নিয়ে সেবা প্রদান করতে গিয়ে রেল প্রশাসন বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এবং গত সাত মাসেও নিয়োগ বিধি সংশোধনে গঠিত ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বিধিমালা সংশোধন না করে আইনী জটিলতা সৃষ্টি করছেন। এবং কোন নিয়ম—নীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি ও পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে পূরো নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রেলওয়ের জনবল ছিল প্রায় ৫৬ হাজার। ১৯৮৫ সালে জনবল ছিল প্রায় ৬৯ হাজার। বর্তমানে অনুমোদিত জনবল প্রায় ৪৭ হাজার। অথচ কর্মরত প্রায় ২২ হাজার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি আর বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। সময়ের বিবর্তনে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। আর বর্তমানে রেলওয়ে প্রতি বছর প্রায় ১১ কোটি যাত্রী পরিবহন করছে।
এই বিশাল সংখ্যার যাত্রী পরিবহনের অনুকূলে রেলওয়ের বর্তমান জনবল হওয়ার কথা ছিল ১ লক্ষের উপরে। কিন্তু বর্তমানে আছে প্রায় ২২ হাজার। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে এতো যাত্রীকে সেবা প্রদান করা কখনোই সম্ভবপর নয় বলে আমরা মনে করি।
অপরদিকে অনুমোদিত ৪৭ হাজার জনবল নিয়োগের যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে সেখানে প্রয়োজনীয় খাতে জনবল ক্যাডার পদ কমিয়ে মাথা ভারী প্রশাসন তথা প্রশাসনিক/ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে অপ্রয়োজনীয়। যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা না বাড়িয়ে টেকনিক্যাল তথা ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর জনবল বৃদ্ধি করাই সমীচীন বলে মনে করি।
রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি আরো বলেন, যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা না করে সহজ ডটকম এর মতো অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেম এর দায়িত্ব দিয়ে। রেলওয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এর সাথে সম্পৃক্ত সাধারণ কর্মচারীদের সাধারণ যাত্রীদের মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করার এই হীন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।এবং দ্রুততম সময়ে সহজ জটকম এর সাথে চুক্তি বাতিল পূর্বক টেন্ডার এর মাধ্যমে দক্ষ ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের হাতে টিকেটিং সিস্টেম দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মনে রাখতে হবে কেউ এসে রেলওয়ের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুললেই বা ঐ ব্যক্তিকে অংশীজন সভার সদস্য বানিয়ে নিলেই রেলওয়ের সেবার মান উন্নত হবে না। কাজেই দ্রুততম সময়ে নিয়োগ বিধি সংশোধনপূর্বক রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল নিয়োগ করার মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধি করুন।
নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের নামে শুধু রেল কর্মচারীদের সাথেই প্রতারণা করছে না, কোন একজনকে অংশীজন সভার সদস্য করার নামে ‘সহজ ডট কমের’ টিকেটিং অব্যবস্থাপনা আড়াল করে সাধারণ যাত্রীদের সাথেও প্রতারণা করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।