বালু লুটেরাদের ষড়যন্ত্র ও আন্দোলনের মুখে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানার বদলির আদেশ হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার সৃজনশীলদের মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলাবলি করছেন বালু লুটেরাদের আন্দোলন ও ষড়যন্ত্রের মুখে ইউএনও’র বদলিতে সরকারি সম্পদ রক্ষা ও লুটপাট বন্ধে বাঁধাগ্রস্ত হবে প্রশাসনিক অভিযান । প্রশাসন বালুলুটপাট বন্ধে আগ্রহ হারাবে। জানা যায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ির ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর ৩ টি বালু মহাল ও ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর ২টি বালু মহাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলা ১৪৩১ সালের জন্য এক বছর মেয়াদে ইজারা দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়েছে বালু মহালগুলো । প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোগাই ও চেল্লাখালি, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচার ৪ টি বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চেল্লাচিল্লি নদীর বুরুঙ্গা বালু মহালটি ইজারা দেয়া হয়। বুরুঙ্গা বালু মহালটি শুধু সরাসরি বিএনপি নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করলেও ৪টি বালু মহাল আওয়ামী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে। কারন নিয়ম অনুযায়ী ১ বছরের জন্য সরকারিভাবে তারাই বৈধ ইজারাদার। এ কারনে বৈধ ইজারাদারদের সু করে বালু মহালগুলো ভোগদখল করে আসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বালু মহালগুলোর নির্ধারিত এলাকায় বালু উত্তোলনের এক দুই মাসের মধ্যেই আর বালু থাকে না। পরে বালুদস্যুরা ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে ইজারার নীতিমালা উপেক্ষা করে নদীরপাড় ফসলি জমি কেটে শুরু হয় বালু লুটপাট। এভাবে গত ১৫ বছর বালু অবৈধভাবে বালু লুটপাট চালিয়েছে বালু দস্যুরা। অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই চালানো হয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। করা হয়েছে বালু লুটপাটকারিদের জরিমানা। দেয়া হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা। ভাঙচুর করা হয়েছে বালু উত্তোলন যন্ত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলেও প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন বালুদস্যুরা আন্দোলন ও ষড়যন্ত্রের সাহস ও সুযোগ পায়নি। বেপরোয়াভাবে হয়নি বালু লুটপাট। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে শেরপুরের সীমান্তবর্তী নদী,খাল,ঝর্ণা, ফসলি জমি, পাহাড় থেকে শুরু হয় বালু লুটপাটের মহোৎসব । বালুদস্যুরা হয়ে উঠে বেপরোয়া। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে। বালুদস্যুরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে অবৈধভাবে বালুর লুটপাট চালিয়ে আসছে। অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। দেয়া হচ্ছে বালু লুটপাটকারিদের সাজা। ভাঙচুর করা হচ্ছে বালু উত্তোলন যন্ত্র। করা হচ্ছে জরিমানা। কিন্তু অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে উল্টো প্রতিরোধের মুখে পরছেন প্রশাসন। অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধের বিষয় ব্যবস্থা নিতে গেলে বালুদস্যুরা ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে বলছেন ছাত্রলীগের ক্যাডার। আর সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাংবাদিক। বেপরোয়া ভাবে বালুর উত্তোলন প্রতিরোধ করতে গিয়ে নালিতাবাড়ীর ইউএনও মাসুদ রানার বিরুদ্ধে বালু লুটেরা শুরু করে ষড়যন্ত্র। বালু লুটেরা নানা অজুহাতে ইউএনও’র বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনে সুবিধা করতে না পেরে অবশেষে তার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। জানা গেছে ইউএনও মাসুদ রানা ৫ মাস পূর্বে নালিতাবাড়ীতে যোগদান করেন। এখানে যোগদানের পরপরই অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধের দায়িত্ব পড়েন তার উপর। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বালু লুটেরাদের তুপের মুখে পরেন তিনি। ষড়যন্ত্রের মুখে বদলির আদেশ হয় তার। ইউএনও’র বদলির আদেশে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালু লুটেরা। এছাড়া গত কয়েকদিন পুর্বে অবৈধ বালু পরিবহনের অভিযোগে ঝিনাইগাতী বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতে এক বিএনপি নেতার জরিমানা করা হলে ওকে পড়েন ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে শ্রীবরদী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম খানের বিরুদ্ধে ঘোষ গ্রহণের অভিযোগ আনেন বালুদস্যুরা। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরধরে এক সাংবাদিকের নামেও দেয়া হয় মিথ্যা মামলা। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে দমন নিপীড়ন চালিয়ে অবৈধভাবে বালু লুটপাটের কৌশল অবলম্বন করছেন বালু লুটপাটকারিরা বর্তমানে বেপরোয়া ভাবে দিনে রাতে চলছে বালু লুটপাট। বালু লুটপাট কারীদের থাপায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে পাহাড়, নদী খাল,নদীরপাড়, ফসলি জমি, সেতু কালভার্ট, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য। নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন ৫ আগস্টের পর থেকে বালুদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিরোধ করতে গেলেই হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন বালু দস্যুদের তৎপরতা থামাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বন বিভাগকে। জানা গেছে, নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বালু দিয়ে সারা দেশের বালুর চাহিদা মেটানো হতো। কিন্ত মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় বালু -মহালটি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেড়ে গেছে বালুর চাহিদা। গত বছর প্রতিট্রাক বালু বিক্রি করা হতো ১২ হাজার টাকায়। সে বালু এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। ফলে শেরপুরের বালু স্বর্ণযুগে পৌঁছেছে। হাজার হাজার মানুষ জরিয়ে পরেছে বালু ব্যবসায়। সরে জমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায় জেলা তিনটি উপজেলার ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হাটবাজার গ্রামেরগঞ্জে রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের কোন ধার ধার ছেনা বালুদস্যুরা বালুদস্যদের ষড়যন্ত্র ও হুমকির মুখে ইউএনও’র বদলি ও কর্মকর্তারা তুপের মুখে পড়ার কারণে অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধে হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তবে সৃজনশীলদের মতে ষড়যন্ত্রের মুখে ইউএনও’র বদলিতে বাধাগ্রস্ত হবে বালুটপাট বন্ধে প্রশাসনের অভিযান। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, তিনি ৫ মাস পুর্বে এখানে যোগদানের পরপর অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু জব্দ করা হয়েছে। এসব টাকা সরকারি কোষাগার জমা হয়েছে। তিনি বলেন সরকারি স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ষড়যন্ত্রের মুখে আমার বদলি। এটা আমার প্রতি বেবিচার করা হয়েছে। আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি। ইউএন’র বদলি জনিত কারণে বালু লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের অভিযান বাধাগ্রস্ত হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের অভিযানে বালু লুটপাট বন্ধে কোন বাধাগ্রস্ত হবে না। তিনি আরও বলেন বালু লুটপাট কারীরা যে কেউ হোক বা যত শক্তিশালী হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।