মোঃ মহসিন রেজা,শরীয়তপুর:
শরীয়তপুরে জেলার জেলা শহরে বড় আধুনিক অভিজাত কোন মার্কেট না থাকায় শরীয়তপুর জেলা পরিষদের উদ্যেগে শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে ৬১ শতাংশের বিশাল জায়গার উপরে ১ নং বেজমেন্ট +সাত তলা বিশিষ্ট একটি মার্কেটে ২৮২ টি দোকান তৈরীর পরিকল্পনা করেন জেলা পরিষদের ততকালীন প্রশাসক ও সিইও।
যাতে করে ৯৯.৮৬৪.৭১ বর্গফুটের বিশাল এ আয়তনের বহুতল আধুনিক মানের এ মার্কেটটিতে মার্কেটিং করার সুযোগ পান শরীয়তপুরের মানুষ এবং স্থানীয়রা ব্যাবসা-বানিজ্য করার সুযোগ পান।
সেই লক্ষে ২০১২ সালে পরিকল্পনা মতে বহুতল আধুনিক এ টাওয়ার নির্মাণের কাজ দেওয়া হয় কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্স লিমিটেডকে। ০১ বেজমেন্ট+ সাত তলা ২৮২ টি দোকানের আধুনিক জেলা পরিষদ মার্কেট তৈরী কাজ করার জন্য। জেলা পরিষদের এই বহুতল আধুনিক টাওয়ারের নির্মানে খরচ চুক্তি করা হয় ৪২ কোটি ৭২ লক্ষ ২৮ হাজার ৩শ ৩১ টাকায়।
জেলা পরিষদ টাওয়ার নির্মানের ক্ষেত্রে চৌরঙ্গীর খালের অংশ দখল করার পরেও সাধারণ মানুষ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আনন্দেই ভাসছিলেন বহুতল আধুনিক মার্কেট হবে মার্কেটিং করবে ঘুরবে ফিরবে ব্যাবসা করবে এ আনন্দে কিন্তু প্রায় ১০ বছরেও মার্কেটটি নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশায় ভেঙে পড়েছে জেলার মানুষের মন।
যদিও নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ৩৬ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৫ সালের শেষের দিকে, এদিকে প্রায় ১০ বছর কেটে গেলেও কিংডম গ্রুপ শেষ করতে পারেনি জেলা পরিষদ টাওয়ারের নির্মান কাজ।
জেলা পরিষদের বহুতল এ টাওয়ারটিতে থাকছে দোকান,ব্যাংক, হাসপাতাল, হোটেল, অফিস, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল সহ আরো নানান সুবিধা। এতোদিনে কাজ শেষ হলে শরীয়তপুর শহরবাসীর জন্য মানসিক প্রশান্তির জায়গা তৈরী হতে পারতো বলে মত দেন গুনিজনরা।
এ বিষয়ে একাধীক ভূক্তভোগী জানান,এই মার্কেটে যেসব গ্রাহক দোকান বরাদ্দ নিবেন তারা সবাই অগ্রিম সালামী পরিশোধ করেছেন,
এই সালামীর টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকে বসেছেন পথে কেউবা আবার এই মার্কেটে ব্যাবসা করার আশা ছেড়ে দিয়ে পেতে বসেছেন অন্যকোনো ব্যাবসা কেউবা চলে গেছেন প্রবাসে, টাকা পয়সা সব শেষ করে সবাই এখন বোবা কান্না করছে।
ভূক্তভোগী, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দাবি জেলা পরিষদ টাওয়ারের নির্মান কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করে বরাদ্দ গ্রহনকারীদের দোকান দ্রুততার সাথে বুঝিয়ে দেওয়া হোক, অন্যাথায় সকলের ক্ষতি পূরণসহ সালামীর টাকা ফেরৎ দেওয়া হোক।
এছাড়াও জানা গেছে ইতালীর বাঙ্গালী পাড়া এলাকায় দোকান বরাদ্দের নামে জেলা পরিষদ কিংডম টাওয়ার লিখে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগিয়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে বসবাসকারীদের কাছ থেকেও মোটা অংকের সালামীতে বিক্রি করা হয় এই জেলা পরিষদ টাওয়ারের দোকান।
এদিকে জেলা পরিষদ টাওয়ারের মোট ২৮২টি দোকানের মধ্যে ২৬৭ টি দোকান একাই ক্রয় করেন টাওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্সের স্বত্বাধীকারী নূসরত হোসেন লিটনের স্ত্রী লাকী নূরের নাশিদ ট্রেড। বিক্রয়কৃত ২৬৭ টি দোকানের মূল্য নির্ধারন করা হয় ৪১ কোটি ৭৪লক্ষ ২০ হাজার ৯৬০ টাকা ৫৮ পয়সা। বাকি ১৫ টি দোকানের মূল্যা নির্ধারন করা হয় ১ কোটি ৪২ লক্ষ ২৩ হাজার ৪ শত ৯০ টাকা ৪৯ পয়সা।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানাযায় লাকী নূর নাশিদ ট্রেড এসোসিয়েট এন্ড জেভিএকেএইচএল বাড্ডা বনানী নামের একটি ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্র ক্রয়ের মাধ্যমে এই ২৬৭টি দোকান ক্রয় করে নেয় এবং মার্কেট নির্মানের আগেই দোকান বরাদ্দের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের সালামীর অর্থ গ্রহন করেন।
অথচ মার্কেটের মূল মালিক জেলার পরিষদের প্রাপ্র ৪১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯ হাজার ৫৮ পয়সার মধ্যে নাশিদ ট্রেড নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছেন মাত্র ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা।
জেলা পরিষদ মার্কেটের নির্মান কাজের ধীর গতির বিষয়ে জানতে চাইলে কনস্টাকশন কোম্পানী কিংডম বিল্ডার্স লিঃ এর স্বত্বাধিকারী নূসরত হোসেন লিটন বলেন, আমি এপর্যন্ত যতো টাকার কাজ করেছি জেলা পরিষদ কতৃকপক্ষ আমাকে সে কাজের বিল ঠিক মতো পরিশোধ না করার কারণে মার্কেটের কাজ বন্ধ রয়েছে।
জেলা পরিষদ মার্কেট দোকান লিজ নিয়ে টাকা পরিশোধ না করার বিষয়ে ২৬৭টি দোকান ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান নাশিদ ট্রেড এসোসিয়েট এন্ড জেভিএকেএইচএল এর প্রতিনিধি লাকী নূরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা পরিষদ টাওয়ার নির্মানের বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা পরিষদের সিইও (অতিরিক্ত সচিব) দিদারুল আলম জানান, আমি শরীয়তপুর জেলা পরিষদে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে পেছনের জমে থাকা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, আর এই তালিকায় রয়েছে জেলা পরিষদ টাওয়ারটি এটি প্রায় দশ বছর ধরে কোনোরকমভাবে দোতলা নির্মানধীন অবস্থায় পড়ে আছে এতে জেলা পরিষদের অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, গ্রাহকরাও পড়েছে চরম ক্ষতির মুখে সাথে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। ইতি মধ্যেই কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্স লিঃ এর স্বত্বাধিকারীকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয় ডেকে মিটিং করে দ্রুত গতিতে নির্মান কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন, টাওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ১/১২/২১ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ একবছর সময় নিয়েছে এ সময়ের মধ্যে নির্মানাধীন বহুতল আধুনিক বানিজ্যিক টাওয়ারের বাকি অংশের দোকান তৈরীর কাজ সম্পূর্ন শেষ করবে বলে সময় নেন।।
এছাড়াও তিনি বরো জানান জেলা পরিষদ টাওয়ারের দোকান ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান নাশিদ ট্রেড নাশিদ ট্রেড এসোসিয়েট এন্ড জেভি,এ কেএইচএল এর ব ২/৩ দক্ষিন বাড্ডা গুলশান এই ঠিকানায় তাদের প্রতিনিধি প্রতিনিধি লাকী নূরের অফিসে রেজিস্ট্রার চিঠি পাঠানো হয়েছে কিন্তু চিঠি কেউ রিসিভ করেনি, চিঠি ফেরৎ চলে এসেছে এ থেকে বোঝা যায় নাশিদ ট্রেড নামের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। আমরা জেলা পরিষদ টাওয়ারটি যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করা যায় তার ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।