সঞ্জিত চন্দ্র পণ্ডিত
ছেলেবেলায় ফুটবলটা প্রায় নিয়মিত খেলতাম, কখনো ছোটদের সাথে বা সমবয়সীদের সাথে কখনোবা বড়দের সাথে । আর হাইস্কুল মাঠ রাজনৈতিকটা ছিল আমাদের খেলাধুলার কেন্দ্রস্থল । একদিন বিকেলে মাঠে এসে দেখি বড়ভাইরা ভিন্নরকম একটা খেলা খেলছে। সারাটা বিকেল খেলা দেখলাম এবং এটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো। খেলা শেষ হলে বড়ভাইদের আলোচনায় বুঝতে পারলাম এই খেলার নাম ক্রিকেট এবং সামনে বিশ্বকাপ তাই এর উন্মাদনা ধরে রাখতে ওনারা তখন খেকে বিশ্বকাপের পূর্ব পর্যন্ত ক্রিকেটই খেলবেন। পরদিন আবার মাঠে উপস্থিত কিন্তু আবার খেলতে না পারার কষ্ট নিয়ে মাঠের বাইরে অপেক্ষা। বড়ভাইরা বলল এটা কাঠের বল (ডিউস বল)তোরা ব্যথা পাবি। আমি বাউন্ডারি হওয়া বল গুলো ছুটে গিয়ে কুড়িয়ে দিতাম। আমার বল কড়ানোর একাগ্রতা ও সাহস দেখে তৎকালীন খেলার পরিচালক ফরিদ ভাই আমাকে একদিন খেলার সুযোগ করে দিলেন। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, হয়ে গেলাম সাইড লাইনার থেকে মূল একাদশের নিয়মিত সদস্য। কয়েক বছর পর যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন একটা ম্যাচে আমি দলের পক্ষে খেলতে পারিনি তখন ফরিদ ভাই মন্তব্য করেছিলেন যে তোদের দলের তো পাঁচজন খেলোয়াড়ই নাই। আমি ফাইনাল ম্যাচে ফিরে এসে ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্যের যথাযথ প্রতিদান দিয়েছিলাম তিনটি ভাইটাল প্লেয়ারের দূরহ ক্যাচ আর একটি রান আউট করার মাধ্যমে।
তখন আমি ঢাকার একটি কলেজের ছাত্র। প্রথমবারের মতো পরিবারের দৃশ্যমান বন্ধন থেকে মুক্ত, চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন। আমাদের ক্লাসে বিপরীত জেন্ডারের মাত্র পাঁচ জনের মধ্যে একজন ছিল যথেষ্ট রূপবতী। স্বভাবতই পুরো ক্লাসের দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সে। আমার সাথে কদাচিৎ কথা হতো বটে কিন্তু কোন হৃদ্যতা গড়ে উঠার সুযোগ কখনো হয়নি। আমরা যখন ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি তখন রসায়ন ব্যবহারিক পরীক্ষায় আমার গ্রুপে পড়েছিল । ট্রাইট্রেশন মিলানোর আমার ফলাফল তিনি নিয়ে ভাইবা পারি দিয়ে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে বের হয়ে গেল আর আমি পড়ে রইলাম সেখানে না মিলানোর অপবাদে। পড়ে অবশ্য ভাইবা ভালো দিয়ে সে যাত্রায় মান রক্ষা হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ সময়ে আমার রিপোর্টের সুপারভাইজার ছিলেন তৎকালীন একজন প্রতিশ্রুতিবান সহকারী অধ্যাপক। তাঁর অধীনে কাজ শুরু করেছিলাম পুরোদমে। আমার সেই সুপারভাইজার স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে চলে যাওয়ায় আমরা সাইড লাইনে পড়ে যাই। অন্যরা সুপারভাইজার খুঁজে পেলেও আমাকে কেউ নিতে রাজি হয়নি। অতঃপর আমি তৎকালীন বিভাগীয় চেয়ারম্যানের স্কন্ধে অর্পিত হয়ে লিখিত পরীক্ষায় কাঙ্খিত নম্বর পাওয়ার পরও মৌখিক ও রিপোর্টের নম্বরের কল্যানে হতাশা জনক ফলাফল নিয়ে সেই বৈতরণী পার হয়েছিলাম।
অনেকের মতো আমারও বেকার জীবনের পরিসমাপ্তির লক্ষ্য ছিল বিসিএস। কিন্তু এটা অধরাই থেকে যাচ্ছিল। সেখান থেকে পিএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আমাকে আবার মূল একাদশে জায়গা করে দিয়েছিলেন যার ফলশ্রুতিতে আমার ডাকবাক্সী প্রতিষ্ঠানে পদচারণা।
দেশের এই ক্রান্তিকালে এক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে আমরা এক অসম লড়াইয়ে নেমেছি। এখানে দলের ভাইটাল প্লেয়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের ডাক্তার ভাইয়েরা। তাদেরকে সহযোগিতা করতে মাঠে রয়েছেন প্রসাশন,পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা লড়েছিলাম দৃশ্যমান শক্তির বিরুদ্ধে । সেটা ছিল সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিজয়ের এক সম্মিলন। এখনকার যুদ্ধটা হচ্ছে অনুজীব বনাম বিজ্ঞান । একথা সত্যি যে পূর্বের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জয়ী হয়েছে বিজ্ঞান এবারো বিজ্ঞান হারবে না। কিন্তু সময়টা আমাদের মতো দেশে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে । এই অসম যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য আমাদের প্রয়োজন শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ যারা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনারদের অনুপস্থিতিতে কাজ করবে। বরাবরের মতো আমি বা আমার মতো অনেকেই সাইডলাইনে বসে প্রস্তুত রয়েছে। অপেক্ষা শুধু মাত্র একটা অঙ্গুলীর ইশারা। আপাততঃ ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। ( লেখক: ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল, ডাক অধিদপ্তর, ঢাকা-১০০০)