মোঃ শিফাত মাহমুদ ফাহিম:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসে কমর্রত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা নিয়ে রাণীনগর উপজেলায় চলছে নানান সমালোচনা।
ভুক্তভোগী নাছিমুজ্জামান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর চাকরি দেওয়ার নামে টাকা ও চেক আত্মসাতের অভিযোগ তুলে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার তদন্ত করা হয়েছে। দ্রুত এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগ ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইডে গত ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারী প্রকাশিত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে মোট ১৬৫০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার যোগীভিটা গ্রামের রফিকুল আলম আকন্দের ছেলে নাছিমুজ্জামান আবেদন করেন। এরপর ওই পদে নাছিমুজ্জামানকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ভাইবা পরীক্ষার আগে ও পরে দফায় দফায় চেকের মাধ্যমে এবং নগদসহ মোট ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসে কমর্রত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনে। কিন্তু সেই পদে নাসিমুজ্জামানের চাকুরী না হওয়ায় ঘুষ গ্রহনকারী আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে টাকা ফেরত চাইলে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন টাকা ফেরত না দিয়ে নাসিমুজ্জামানকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে ভয়ভিতী দেখায়। অবশেষে টাকা ফেরত পেতে ও সুষ্ঠু প্রতিকার চেয়ে গত ১৭ আগষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন নাছিমুজ্জামান।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নওগাঁ উপ-পরিচালক আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাওছার হোসেনকে আহবায়ক ও নওগাঁ সদরের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মণিকা এবং রাণীনগর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন সোহেলকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার ২১ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের কর্মস্থল রাণীনগর এসে এ ঘটনার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তরা। এ ঘটনাটি নিয়ে রাণীনগর উপজেলায় চলছে নানান সমালোচনা। আর দ্রুত অভিযুক্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী নাছিমুজ্জামান জানান, আমার এক বন্ধু রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসে চাকুরী করেন। তার মাধ্যমে পরিচয় ঘটে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি আমাকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে দফায় দফায় চেকের মাধ্যমে ও নগদসহ মোট ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। টাকা ফেরত চাইলে আনোয়ার আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয়। অবশেষে আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর আমার টাকা ও চেক ফেরত পাওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি দ্রুত টাকা ফেরতসহ সুষ্ঠু প্রতিকার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসে কমর্রত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন কথা বলতে রাজি হননি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় গত সোমবার তদন্ত হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহবায়ক আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাওছার হোসেন বলেন, তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নওগাঁ উপ-পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ গ্রহন করবেন।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নওগাঁ উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আংশিক হাতে পেয়েছি। পুরোপুরি তদন্ত প্রতিদেবন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।