মো:মুক্তার হোসেন,রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতে জমছে পানি। পথ না পেয়ে সে পানি আর সরছে না। আবার উঁচু এলাকার পানি নেমে গিয়ে জমা হচ্ছে নগরীর নিম্নাঞ্চলে। বৃষ্টি হলেই এসব এলাকায় পানি জমে যায়। বাড়ির ভেতর জমে থাকে। রাস্তার ওপর জমে থাকায় মানুষের চলাচল করা দায় হয়ে ওঠে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে ।
সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা ওইসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেখানে ড্রেনের অভাবে পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। অতীতে যেসব স্থানে পুকুর ও জলাধার ছিল সেগুলো ভরাট করে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। এর ফলে বৃষ্টি হলেই পানি জমা হয় সড়কের ওপরে। কথাগুলো বললেন দড়িখরবোনা এলাকার সমাজকর্মী শরিফুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে নগরীর কাজলা এলাকার রমজান আলী বলেন, কাজলা এলাকার কয়েক স্থানে প্রায়ই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে অচিরেই জলাবদ্ধতা দূর করতে ইতোমধ্যে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকলে নগরীর জলাবদ্ধতা কোন দিনই দূর হবে না।
নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের মুসলিম আলী বলেন, এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা নিত্যসঙ্গী। এলাকাটি সবে গড়ে উঠছে, তাই বর্ষা আসলেই প্রতি বছর মেহেরচণ্ডীর আর্ট কলেজ, মেহরচণ্ডী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠসহ অনেক স্থানে পানি জমে থাকে। এখনও সেখানে পানি জমে আছে বলে জানান তিনি।
৩০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাতুল বলেন, প্রতি বছর এ সময় এ এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের উপচেপড়া পানি এ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, এখানে ডেনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ি করলেন তিনি।
এ সম্পর্কে নগরীর টিএন্ডটি অফিসের সাবেক কর্মকর্তা তেরখাদিয়া মধ্যপাড়ার এশারত উদ্দিন মণ্ডল বলেন, তেরখাদিয়া মধ্যপাড়া ও উত্তরপাড়া এলাকায় বছরের ৬ মাসই পানি জমে থাকে। এখনও সেখানে হাঁটুপানি জমে আছে। এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য কোন ভাল রাস্তা ও ড্রেন নেই বললেই চলে। আর পানি নিষ্কাশনের জন্য নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ড্রেন থাকলেও তার ওপরে নেই কোন স্লাব। এতে ময়লা আবর্জনা, মাটি জমা হচ্ছে ড্রেনে। ফলে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। তিনি রাজশাহীর অতীত অবস্থা সম্পর্কে বলেন, অতীতে শহর ও শহরতলীতে অনেক পুকুর ও জলাধার ছিল যা বৃষ্টির পানি ধারণ করে রাখতো। এখন তা দখল ও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৬০ সালে রাজশাহী শহরে জলাশয় ছিল ৫ হাজারের অধিক। ১৯৮০ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ টিতে। ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে রাজশাহীর জলাশয়ের ৯৫ শতাংশ ভরাট ও অবৈধ দখলে চলে গেছে। প্রভাবশালীরা দখল করে সেখানে গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন। এর ফলে নগরীতে বৃষ্টি বা অতি বৃষ্টি হলে তা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পুকুর আর ড্রেনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় পানি বের হতে পারছে না। জমা হচ্ছে সড়ক নয় তো বাড়ি-ঘরে।
এ ব্যাপারে নগরীর ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, এ ওয়ার্ডের চণ্ডীপুর, লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া, বাকির মোড়ে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে একটু বৃষ্টি হলেই শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানে পানি জমে যায়। সেখানকার পুকুর ও লেকগুলো বৃষ্টির পানিতে ভর্তি হয়ে উপচে গিয়ে পার্কের রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। চারদিক কর্দমাক্ত হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় উদ্যানের জনৈক কর্মচারী বলেন, পুলিশ লাইনের জমে থাকা পানি পদ্মানদীতে নামতে না পেরে কেন্দ্রীয় উদ্যানের দিকে এসে জমা হচ্ছে। এছাড়া পার্কে নভোথিয়েটার ভবন নির্মাণ কাজ চলায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি নামতে না পেরে কেন্দ্রীয় উদ্যানের মধ্যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নগরীর ১নং ওয়ার্ডের গুড়িপাড়ার কিছু কিছু এলাকা, ২নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া ও তার আশেপাশের এলাকা, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডিঙাডোবা ও বহরমপুর এলাকা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেরখাদিয়া মধ্যপাড়া, উত্তরপাড়া, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শিল্পীপাড়া, কয়েরদাড়া, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য নওদাপাড়া, ভাড়ালিপাড়া, পশ্চিম নওদাপাড়াসহ আশপাশ এলাকা, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেহেরচন্ডির দক্ষিণপাড়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে। এসব এলাকার খানা-খন্দক ও নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতায় মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে।
নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা একটি বড় সমস্যা, এ সমস্যা সমাধানে রাসিক কী উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাওয়া হলে রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম তুষার বলেন, জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে নগরীতে ৩ একরের যে সব পুকুর রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ২১টি পুকুরকে রাসিকের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তা পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এক প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। অপর দিকে নগরীর যক্ষ্মা চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে বরেন্দ্র জাদুঘর ও হেতম খাঁ বড় মসজিদ বিলসিমলা হয়ে মহিলা কমপ্লেক্স পর্যন্ত নতুন ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাসিকের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের তৃতীয় ফেজের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চতুর্থ ফেজের কাজ শুরু হবে। এটি করোনার কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। ইতোমত্যে ৫০ বছরের একটি নগর মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। এটির কাজ ১০ বছরের মধ্যে শেষ হবার কথা। এর জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে । এই কাজ শেষ করতে পারলে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ত¦রান্বিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়নে ৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেখানকার ড্রেন ও রাস্তাসহ সকল সমস্যার সমাধান হবে।