অনলাইন ডেস্ক♦♦
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কথিত চোর হিসেবে মস্তিষ্ক অপ্রকৃতস্থ তোফাজ্জল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শামীম আহমেদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ মাসুদ, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মোহাম্মদ মামুনের হত্যাকান্ডসহ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মব জাস্টিস’ বা ‘উত্তাল জনতার বিচার’ নামে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে তাতে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্র্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ’র শীর্ষ নেতৃদ্বয় বলেন, ‘মব জাস্টিস’ কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। ‘মব জাস্টিস’-এ হত্যাকান্ড খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয়স্পর্শী বিষয়। সকলকে মনে রাখতে হবে ‘মব জাস্টিজ’ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অশনি সঙ্কেত।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, দেশে আইনের শাসন থাকলে এ রকম অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারত না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে যে কোন মূল্যে ‘মব জাস্টিস’ বন্ধ করতে হবে।
তারা আরো বলেন, ‘মব জাস্টিসে’র নামে নরপশুর ন্যায় নির্মমতা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এখনও সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। ফলে একটি পক্ষ তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য নানাবিধ অপরাধ কর্মে জনতাকে ব্যবহার করতে চাইছে। এই সরকারের শুরু থেকেই যেসব বিচারবহির্ভূত কাজ হয়েছে সেগুলোর অপরাধীরা এখনও বিচারের আওতায় আসেনি। এ কারণেই অপরাধীদের সাহস আরও বেড়ে গেছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিবাদিদী কায়দায় এ ধরনের হত্যাকান্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও ‘মব-ভায়োলেন্সে’র মতো সকল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ও উপাদানের শিগগিরই বিলোপ করতে হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সকল অপরাধের বিচারের দায়িত্ব আদালতের। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে তারা অপরাধ করছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলে কোন অশুভ শক্তিকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে।
তারা বলেন, দেশজুড়ে মব জাস্টিজ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, মাজার ও মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জানান দিচ্ছে। ৫ আগস্টের পরও এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড প্রমাণ করে, ফ্যাসিবাদি সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামো এবং ব্যবস্থা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উদাসীনতা এবং বিভিন্ন হামলার পরেও যথাযথ আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এ ধরনের মব-ভায়োলেন্সের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, পতিত সরকারের আমলেও একধরনের ‘মব জাস্টিস’ ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে আরেক ধরনের ‘মব জাস্টিস’ চলছে। এটা কোনোভাবে চলতে পারে না। ‘মব জাস্টিস’ খোদ আদালত প্রাঙ্গণেও হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাজার, দরবার, খানকায় হামলা হচ্ছে। আর এসব হামলার বিরুদ্ধে সরকার নির্দেশ দিয়েই চুপচাপ বসে আছে, কার্যকর কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। অন্তর্র্বতী সরকারের বয়স দেড় মাস হতে চলল। দুএকটি ক্ষেত্র ছাড়া আমরা কোথাও সরকারের তেমন সক্রিয়তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। ‘মব-জাস্টিস’ গ্রহণযোগ্য নয় এবং কোনও সমাধানও আনবে না। আইনের মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আইনের মাধ্যমেই সকল হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। এ অবস্থা বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে ‘জুলাই-আগস্ট’ বিপ্লবের অপমৃত্যু ঘটতে বাধ্য।