নিজস্ব প্রতিবেদক♦
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকায় বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ঐতিহ্যবাহী মনোয়ার জুট মিলটি ২৯ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ মিলটি আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু জমি ও কিছু অবকাঠামো ছাড়া আর কিছুই নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লুটপাট হয়ে গেছে। এখন শুধু জমি ও পুরাতন অবকাঠানো দাঁড়িয়েছে।
গতকাল (১৮ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়েও মিলের অভ্যন্তরে কোন যন্ত্রাংশ দেখা যায়নি। শুধু পুরাতন অবকাঠামো দেখা গেছে। চোঁখের সামনে ঐহিত্যবাহী মিলটির ধ্বংস হতে দেখে এ মিলের সাবেক শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকায় ১৯৬৫ সালে ৯ একর ৫ শতাংশ জমির উপর শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মনোয়ার জুট মিলটি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মিলের উৎপাদিত পণ্য গুণগত মানের দিক থেকে উচ্চ মানের হওয়ার সকল পণ্যই বিদেশে রফতানী হতো। স্বাধীনতার পর মিলটি রাষ্ট্রয়ত্ত্ব করা হলে অত্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে মিলটির উপর পড়তে থাকে কালো ছায়া। ফলে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার লোকসানের অজুহাতে এ মিলটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। ফলে মিলের সহস্রাধিক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা চাকুরি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। এরপর মিলটি বিক্রির জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ইং সালে একটি টেন্ডার আহবান করে। উক্ত টেন্ডারে মেসার্স শামছুন্নাহার জুট ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি ১৪ বার সময় নিয়েও উক্ত টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয় এবং বিজেএমসি‘র সকল শর্ত ভঙ্গ করলে কর্তৃপক্ষ ঐ প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশটি বাতিল করেন। পরে ২০০২ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। স্থানীয় একটি সূত্রে জানায়, অন্য একটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে আরেকটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
এ মিলের নিরাপত্তা কর্মী দুলাল উদ্দিন বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে এ মিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। তিনিও স্বীকার করেন মিলে কোন যন্ত্রাংশ নেই। সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা মাত্র ৫ জন নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছি। দুর্বৃত্তরা এক সঙ্গে ৫০-৬০ করে জোট বেধে এসে যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। বাধা দিলে আমাদেরকে মারধর করে। বেশ কয়েকবার হামলার স্বীকারও হয়েছি। একবার দুর্বৃত্তরা আমাদের সকলকে বেধে পানিতে ফেলে দেয়। পরে দুর্বৃত্তরা ট্রলার ও গাড়ি যোগে যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে মিলের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। আমরা বিজেএমসি কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করেছি। এছাড়াও চুরির বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বেশ কয়েকটি অভিযোগও দেয়া হয়েছে। আটি এলাকাবার বাসিন্দা ও এ মিলের প্রশাসন বিভাগের সাবেক কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, মিলটি চোখের সামনে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংস হয়ে গেলো। মিলের সকল যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এতে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। মিলের তাঁত বিভাগের সাবেক শ্রমিক বাচ্চু মিয়া বলেন, মিলটি বন্ধ হওয়ার পর আমি বিদেশী চলে যাই। ফিরে এসে দেখি মিলটির যন্ত্রাংশ লুটপাট হয়ে গেছে। স্থানীয়বাসিন্দারা জানান, বর্তমান বাজার মূল্যে মিলটির শুধুমাত্র জমির মূল্যই ৬০-৭০ কোটি টাকা হবে। মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সাঃ সেবা) মোঃ নাসিমুল ইসলাম বলেন, এক কথায় মামলা থাকায় মনোয়ার জুট মিলসটি হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, মিলটি দীর্ঘদিন আগে বন্ধ হয়ে গেছে। মেশিনারিজের কোন কাজ হয় না।
Tags: মনোয়ার