নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘কবে ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ?’ এমন প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ যথাসময়েই ভ্যাকসিন পাবে। কিন্তু, সরাসরি ভারতের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। চুক্তিটা বাণিজ্যিক নাকি জিটুজি (সরকার থেকে সরকার), এ নিয়েও রয়েছে বিপরীত বক্তব্য। তাই ভ্যাকসিন ‘ধোঁয়াশা’ কাটাতে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।
তারা বলেন, ভ্যাকসিন কবে আসবে, তা নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব বলেছেন, ‘আমরা চুক্তি অনুযায়ী টিকা পাব’; ‘চুক্তির ভিত্তিতে কথা বলছি’। এখন সেই চুক্তিতে কী আছে, সেটাও তো পরিষ্কার করে বলা হয়নি। জনমনে প্রশ্ন আসলে কী আছে চুক্তিতে? চুক্তি সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় বলছে জিটুজি, আর বেক্সিমকো বলছে বাণিজ্যিক, তাহলে আসলে কোনটা ? সবমিলিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। বেক্সিমকোর এমডি নাজমুল হাসান পাপন তো বলেছেন যে, তারা যে চুক্তি করেছেন, সেই অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন দিতে বাধ্য। এখন চুক্তির পর যদি সেরামের সিইও বলেন যে, তারা এখন দিতে পারবে না, তাহলে কি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পক্ষেপ নেয়া যাবে।
নেতৃদ্বয় বলেন, যেহেতু এটা একটা জাতীয় সংকট, তাই চুক্তির বিষয় বস্তুটা পরিষ্কার করা উচিত। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক কথাই সরকার পরিষ্কার করছে না। সরকারকে জনমনে সৃষ্টি হওয়া প্রশ্ন পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের দেশে ওষুধ প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু, ডব্লিউএইচও অনুমোদন না দিলে তো হবে না। কারণ, তাদের অনুমোদন ছাড়া এই ভ্যাকসিন কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভ্রান্তি মোচনে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটা হচ্ছে স্পিরিট। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টি হচ্ছে। এ কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই দুই সরকারের বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। অন্যথায়, বিভ্রান্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। যা উদ্বেগের বিষয় হবে। যাতে করে ভ্যাকসিন নিয়ে জনমনে অনাস্থা তৈরি হতে পারে। ভ্যাকসিনের মান, ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মনে বিশ্বাস রাখা খুব জরুরি।
নেতৃদ্বয় বলেন, চুক্তির বিষয়টি পরিষ্কার করতে সরকারকে জনসম্মুখে এটা নিয়ে কথা বলতে হবে। এতে জনগণের মনে কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না, তাদের মনে আস্থা তৈরি হবে এবং তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখাটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাকসিন নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্বে অনেক ধরনের পলিটিসাইজেশন হয়ে আছে। ভ্যাকসিন ইস্যু নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, এর জন্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন যে, ‘ভারত সরকার দুই-আড়াই ডলারে পায়, তাহলে আমরা কেন পাঁচ ডলারে কিনব? এখানে বেক্সিমকোকে বাণিজ্যের সুযোগ দেওয়া হয়েছে কি না?’ এই বিষয়গুলোও পরিষ্কার করার দায়িত্ব সরকারেরই। সরকারের যে স্বচ্ছ, সেটা মানুষের মাঝে প্রমাণিত হতো চুক্তির বিষয়ে সবাই জানলে। কিন্তু, এগুলো গোপন রাখার কারণে সরকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা অন্য কারো স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তো সরকার না। এই যে ভ্যাকসিন নিয়ে ধোঁয়াশা, মানুষের মাঝে সন্দেহ-উদ্বেগ, মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞদের ওপর দোষ দেওয়া হচ্ছে যে, তারা সমালোচনা করছে। এখন এই সুযোগটাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন তৈরি করে দিয়েছে? তারা কেন পরিষ্কারভাবে সব তুলে ধরছে না? জনগন সব জানলে তো তাদের মাঝে আর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। পরোক্ষভাবে এই সুযোগটা তো তৈরিই করে দেওয়া হচ্ছে।